বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছেন তাদের এই দাবিকে যোক্তিক হিসেবেই মনে করেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে, শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি এবং পরিবেশ ঘোলাটে করতে এর নেতৃত্ব অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এবং অন্য একটি দল এই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ ফান্ডের পাশাপাশি দাবিদাওয়ার অন্যান্য আন্দোলনের মতো এই আন্দোলনেও নিজেদের লোকবল ঢুকিয়ে দিয়েছে।’
বুধবার (১৫ অক্টোবর) নয়াপল্টনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের কার্যালয়ে শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষক-কর্মচারী প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক মো. জাকির হোসেন। ইরার সভাপতি ফারুক হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান সালমানের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী একাধিক নেতার আওয়ামী আমলের আমলনামা (ছবি ও ভিডিও) তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন কারা করছে? কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে? দেখেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সেই শিক্ষক এবং ধানমণ্ডির একটি স্কুলের আওয়ামী লীগের বড় নেতাসহ আরো কয়েকজনকে আওয়ামী লীগ প্রচুর ফান্ড দিচ্ছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, ‘এখানে পরিষ্কারভাবে তারা বিভিন্ন সময় শেখ মুজিবের ছবি দিয়ে মাঠে কাজ করেছেন এবং টুঙ্গিপাড়াতে শেখ মুজিবের মাজারে গিয়ে কান্নাকাটি করেছেন, মোনাজাত করেছেন। তাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। এ ছাড়া অন্য একটি দলও তাদের ব্যবহার করছে।’
সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আন্দোলনের সময়গুলো খেয়াল করুন। এর আগে তারা শিক্ষকদের ভুল বুঝিয়ে ১৫ আগস্টের আগে (১৩ আগস্ট) ঢাকায় নিয়ে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। ধর্মঘটের কথা বলে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের সাথে মিলে ১৫ আগস্ট ঝামেলা করবেন। অথচ একজন সাধারণ শিক্ষক হয়তো জানে তিনি তার দাবির পক্ষে কথা বলছেন, তার দাবির জন্য আন্দোলন করছেন কিন্তু তিনি যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছেন সেটি কিন্তু বুঝতে পারছেন না।’
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষকদের চলমান যে আন্দোলন, এই আন্দোলনে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা সাধারণ শিক্ষকদের দাবির প্রতি সহমর্মিতা জানাই, তবে আমরা বলতে চাই, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ হলো মুখ্য দাবি। এ দেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী, তাদের প্রাণের দাবি হলো জাতীয়করণ। এ জাতীয়করণ হলে শতভাগ বাড়িভাড়া আমরা পাব। এটি হলে অন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলোও আমরা অনায়াসে পেয়ে যাব।’ একই সঙ্গে তিনি চলমান আন্দোলনে যুক্ত একটি গোষ্ঠীকে ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর’ উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা দোসর, তারা সুবিধা নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের মাঠে নামিয়েছে।’
তিনি বলেন, এ দাবির বিষয়ে গত ৭ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমার দল যদি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে, তাহলে আমরা এ দাবিটি পূরণ করব। যেহেতু দেশের সব থেকে বড় দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ক্ষমতায় গেলে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের পেছনে দাবি নিয়ে আর কথা বলার প্রয়োজন নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘আজকে আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনিও নীতিগতভাবে একমত ৪৫ শতাংশ যে বাড়িভাড়া সেটি এবং জাতীয়করণের বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা নীতিগতভাবে এটিকে মানি, কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে জাতীয়করণ করা সম্ভব নয়। তিনি আগামী সরকারের কাছে এ দাবিটি করতে পরামর্শ দেন। সরকারি নিয়মানুযায়ী আপনাদের যে বাড়িভাড়ার দাবি সেটির সঙ্গেও আমরা একমত। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আমরা একটা বাজেট পেশ করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয় বাইরে থাকায় আমাদের আরেকটু সময় লাগবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের পক্ষে, কিন্তু আপনারা যদি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে, ক্লাস বন্ধ রেখে যদি এটা করেন তাহলে সমাজে আপনাদেরকেও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। সেই বিষয়টি নিয়ে আপনারও কথা বলেন। কত শতাংশ শিক্ষক আন্দোলনে আছে সেটি আমরা দেখছি না। একজন শিক্ষকও যদি থাকে সেটিকে আমি সাপোর্ট করি। যৌক্তিক দাবি সাপোর্ট করা আমাদের সংগঠনের নৈতিক দায়িত্ব।’
এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের বলব, এ দেশ যা কিছু আপনাদের দিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট দিয়েছে, একসময় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন দিয়েছে। সুতরাং যারা আপনাদের পরীক্ষিত নেতা, তাদের সঙ্গে কাজ করুন। তাদের কথা অনুযায়ী আপনারা কাজ করুন। তাহলে আপনারা বিতর্কিত হবেন না। বিতর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতারা একাত্মতা পোষণ করছেন। দেশের সব থেকে বড় দল, যেখানে সেই বড়দলের শীর্ষ নেতা তারেক রহমান যখন বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে সকল দাবি পূরণ করবেন। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের পেছনে দাবি নিয়ে আর কথা বলার প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের যে দাবিটা সেটি পূরণ হবে। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে সব শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে বসতে বলেছি। ডেকে আলোচনা করেন। কারণ আমাদের শিক্ষকরা মাঠে রয়েছেন।’ ডেকে একটা সম্মানজনক সমাধান দেন। সেলিম ভূঁইয়া শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান।
ইউটি/টিএ