যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে আলোচনায় উঠে এসেছে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের অস্ত্র সমর্পনের বিষয়টি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে যে ২০টি পয়েন্ট রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো হামাসের অস্ত্র সমর্পণ।
গত বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে এক্সক্লুসিভ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোহাম্মদ নাজাল। সেখানে রয়টার্স তাকে হামাসের অস্ত্র সমর্পণের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল। জবাবে তিনি বলেছেন, “আমি এ প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’-তে দিতে পারব না। এটি (হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ) একটি প্রকল্প এবং সরাসরি বলতে গেলে হামাসের অস্ত্র সমর্পণের বিষয়টি নির্ভর প্রকল্পের ধরনের ওপর। আপনার যে অস্ত্রসমর্পণ বা নিরস্ত্রীকরণ প্রকল্পের কথা বলছেন, তার অর্থ কী? অস্ত্র গ্রহণ করবে কে? কার কাছে আমরা অস্ত্র সমর্পণ করব?”
সাক্ষাৎকারে নাজাল বলেছেন, বর্তমানে গাজায় নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্ত হতে চায় হামাস। সেই সঙ্গে গোষ্ঠীটি মনে করে, অস্ত্রসমর্পণ নিয়ে বিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।
“এখন যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় চলছে। এটা একটা ক্রান্তিকালীন অবস্থা। একদিকে গাজায় সাংঘাত থেমেছে, ত্রাণের প্রবেশ স্বাভাবিক হচ্ছে -অন্যদিকে চুরি, ডাকাতি, ত্রাণ লুটপাটের মতো অপরাধ বাড়ছে। অস্ত্রধারী গ্যাং তৈরি হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বলা হয়েছে এবং হামাস সেই সরকারের অংশ হিসেবে গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে চায়।”
“তাছাড়া শুধু হামাস অস্ত্র সমর্পণ করলেই তো হবে না, গাজায় আরও সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। তাদেরও অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। আমরা মনে করি, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।”
গেল ২৯ সেপ্টেম্বর গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনাটি প্রস্তাব আকারে পেশ করেন ট্রাম্প। ইসরায়েল ও হামাস উভয়ে তাতে সম্মতি জানানোর পর গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় গাজায়।
অবশ্য ট্রাম্প এই প্রস্তাব পেশ করার অনেক আগে থেকেই আলোচনায় ছিল হামাসের অস্ত্রসমর্পণের বিষয়টি। আগেও কয়েক বার হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং প্রতিবারই তা প্রত্যাখ্যান করেছে গোষ্ঠীটি।
মোহাম্মেদ নাজ্জালের এই সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তাতে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে সব জীবিত জিম্মি ও মৃত জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তরের কথা ছিল হামাসে। তা তারা করেনি। হামাস খুব ভালোভাবেই জানত যে জিম্মিরা এবং মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ কোথায় আছে।”
“বর্তমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাসকে অবশ্যই অস্ত্রসমর্পণ করতে হবে। এখানে কোনো ‘যদি’, ‘কিন্তু’ নেই এবং এটা যত তাড়াতাড়ি ঘটে, ততই ভালো। হামাস অনর্থক সময় নষ্ট করছে।”
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসেও যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। সেখান থেকে এর প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, “তারা (অস্ত্র সমর্পণের ব্যাপারে) আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আমরা আশা করি যে তারা এই প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করবে।”
সূত্র : রয়টার্স
পিএ/টিএ