সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন। প্রস্তাবে গত ১০ বছরের ব্যবধানে বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ। এই খবরে খুশি দেশের প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বেসরকারি চাকরিজীবীরা।
গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) এই খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে জাতীয় বেতন কমিশন। এতে প্রস্তাবে গ্রেড-১-এর কর্মকর্তাদের মূল বেতন সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৯৪ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেড-২ এ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ টাকা, গ্রেড-৩ এ ১ লাখ ৯ হাজার ৮৪ টাকা, গ্রেড-৪ এ ৯৬ হাজার ৫৩৪ টাকা, গ্রেড-৫ এ ৮৩ হাজার ২০ টাকা, গ্রেড-৬ এ ৬৮ হাজার ৫৩৯ টাকা, গ্রেড-৭ এ ৫৫ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-৮ এ ৪৪ হাজার ৪০৬ টাকা, গ্রেড-৯ এ ৪২ হাজার ৪৭৫ টাকা, গ্রেড-১০ এ ৩০ হাজার ৮৯১ টাকা মূল বেতনের পস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রেড-১১ তে ২৪ হাজার ১৩৪ টাকা, গ্রেড-১২ তে ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, গ্রেড-১৩ তে ২১ হাজার ২৩৮ টাকা, গ্রেড-১৪ তে ১৯ হাজার ৬৯৩ টাকা, গ্রেড-১৫ তে ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা, গ্রেড-১৬ তে ১৭ হাজার ৯৫৫, গ্রেড-১৭ তে ১৭ হাজার ৩৭৬ টাকা, গ্রেড-১৮ তে ১৬ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্রেড-১৯ তে ১৬ হাজার ৪৪১ টাকা এবং গ্রেড-২০ এর কর্মচারীদের জন্য ১৫ হাজার ৯২৮ টাকা মূল বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় বেতন কমিশন।
খসড়া চূড়ান্তের ফলে সারা দেশের প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঝে ব্যাপক আনন্দের সঞ্চার হলেও উদ্বেগে রয়েছেন বেসরকারি খাতের কয়েক কোটি মানুষ। কারণ বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে পারে বাড়িভাড়া, শিক্ষা, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনের নানা ব্যয়।
বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৬৪ শতাংশ, যা আগের তুলনায় বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণত মূল্যস্ফীতির হার যদি আয় বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগণের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে।
খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেই প্রভাব সরাসরি মানুষের ভোগ্যপণ্যের ওপর পড়ে, যা সামাল দেওয়া কঠিন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩.৬৯ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৩৬ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৮.২৯ শতাংশ। যদিও ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৯.৯২ শতাংশ, অর্থাৎ বার্ষিক বিবেচনায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাসাভাড়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ডলার রেট এবং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে তা মূল্যস্ফীতির ওপর আরও চাপ তৈরি করবে।
এদিকে আজ মঙ্গলবার তথ্য বিবরণীতে সরকার জানিয়েছে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি ন্যায়সংগত ও কার্যকরী নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত বেতন কমিশনের কাজ এগিয়ে চলছে।
ইতিমধ্যে অনলাইনে চারটি প্রশ্নমালায় প্রাপ্ত সর্বসাধারণের মতামত ও সুপারিশ যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বেতন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অ্যাসোসিয়েশন বা সমিতি কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত বা সুপারিশ দিয়েছে। প্রাপ্ত সুপারিশ ও মতামত কমিশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। কমিশন আশা করছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই বেতন কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করা সম্ভব হবে।
আরো বলা হয়, এর আগে ১-১৫ অক্টোবর সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকরিজীবী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিয়েশন বা সমিতি এই চার ক্যাটাগরিতে প্রশ্নমালার মাধ্যমে কমিশন অনলাইনে সর্বসাধারণের মতামত নিয়েছে।
আইকে/ টিএ