অফিসের ডেস্কে বসে কাগজপত্রের হিসেব করতেন তিনি, আজ সেই নারী হাজারো দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তার অভিনয়ের জাদুতে। পরিণীতি চোপড়া-যিনি একসময় করপোরেট দুনিয়ার পেশাদার ছিলেন, কিন্তু ভাগ্য একদিন তাকে টেনে নেয় একেবারে অন্য মঞ্চে-রুপালি পর্দার আলোয়।
ব্যর্থতা, অনিশ্চয়তা আর ভাঙা স্বপ্ন পেরিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, জীবনের আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখায়। তার গল্প শুধু সফল এক অভিনেত্রীর নয়, বরং এক অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর, যিনি প্রমাণ করেছেন-পথ বদলালেও লক্ষ্য হারায় না, যদি সাহস থাকে নতুন করে শুরু করার।
আজ বলিউডের প্রতিভাবান অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়ার জন্মদিন। তার জীবনের গল্প যেন এক অসম্পূর্ণ স্বপ্নের ভেতর থেকেও নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর প্রতীক। কখনও করপোরেট অফিসের চাকরিজীবী, কখনও পর্দার সামনে এক আত্মবিশ্বাসী নারী-পরিণীতি প্রমাণ করেছেন, ভাগ্য নয়, নিজের সিদ্ধান্তই মানুষকে গড়ে তোলে।
১৯৮৮ সালের এই দিনে ভারতের হরিয়ানার অ্যাম্বালায় পরিণীতির জন্ম। স্নেহময়, শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই মেয়েটির জীবনের লক্ষ্য প্রথমে সিনেমা নয়, ছিল অর্থনীতির জগতে জায়গা করে নেওয়া। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে অর্থনীতি, ব্যবসা ও ফাইন্যান্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তার লক্ষ্য ছিল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হওয়া।
কিন্তু ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ভেঙে দেয় সেই স্বপ্ন। চাকরির সুযোগ হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন পরিণীতি। কেউ হয়তো এই জায়গায় ভেঙে পড়তেন, কিন্তু তিনি বেছে নেন নতুন দিক-চলচ্চিত্রের পর্দার পেছনের কাজ।
যশরাজ ফিল্মসে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ভাগ্যের চাকা তখন ঘুরতে শুরু করেছে-অভিনয়ের প্রতি গভীর আগ্রহ জন্ম নেয় তার ভেতরে। পরিচালক আদিত্য চোপড়ার নজরে আসার পর ২০১১ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘লেডিজ ভার্সেস রিকি বাহল’। পার্শ্বচরিত্র হলেও তার উপস্থিতি ছিল এমন প্রাণবন্ত যে দর্শক ও সমালোচক সবাই তাকিয়ে দেখেছিলেন এক নতুন প্রতিভাকে।
পরের বছরই ‘ইশকজাদে’ ছবিতে জয়া চরিত্রে অভিনয় করে পরিণীতি পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিশেষ স্বীকৃতি। শক্ত সংলাপ, সাহসী চরিত্র আর স্বাভাবিক অভিনয় তাকে বলিউডে আলাদা পরিচয় এনে দেয়। তিনি শুধু নায়িকা নন-একজন শিল্পী, যিনি চরিত্রের ভেতরে ডুবে যান নিঃস্বার্থভাবে।
তবে জীবনের পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। কয়েকটি ছবির ব্যর্থতা তার ক্যারিয়ারে ধাক্কা আনলেও পরিণীতি হার মানেননি। বরং নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন-ওজন কমিয়েছেন, ফিটনেসে মনোযোগ দিয়েছেন, নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছেন। ফলাফল ‘গোলমাল এগেইন’, ‘সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফারার’ ও ‘সাইনা’-এর মতো ছবিতে তার পুনর্জন্ম।
বিশেষ করে ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়ালের জীবনীভিত্তিক ছবিতে তার নিবেদন ছিল অনবদ্য। সাইনার মতো খেলোয়াড়ের জীবনের প্রতিটি অনুপ্রেরণার মুহূর্তকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন অকৃত্রিম অভিনয়ে।
স্ক্রিনের বাইরে পরিণীতি যেমন আত্মবিশ্বাসী, তেমনি বাস্তব জীবনেও তিনি হয়ে উঠেছেন সাহসী এক নারী।
নিজের মত প্রকাশে খোলামেলা, ফ্যাশনে মার্জিত কিন্তু আধুনিক আর আচরণে সহজ ও মিষ্টি। রেড কার্পেট থেকে ইনস্টাগ্রাম-সব জায়গায়ই নিজের উপস্থিতি জানান দেন ব্যক্তিত্বের দীপ্তিতে।
২০২৩ সালে তিনি বিয়ে করেন ভারতের তরুণ রাজনীতিক রাঘব চাড্ডাকে। তাদের সম্পর্কের মধ্যে আছে সম্মান, ভারসাম্য ও বোঝাপড়ার সুন্দর ছায়া।
সম্প্রতি মা হয়েছেন পরিণীতি। আরও এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে তার জীবনে।
জীবনের প্রতিটি বাঁকে তিনি দেখিয়েছেন, সাফল্য মানে কেবল আলো নয়, বরং ব্যর্থতার ভেতর থেকে আলো খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা। পরিণীতি চোপড়া আজ শুধুই এক তারকা নন-তিনি এক অনুপ্রেরণা, এক প্রমাণ যে ভাঙা স্বপ্নের ভেতরেও জন্ম নিতে পারে নতুন আলো।
টিজে/এসএন