রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে কি না তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের ওপর। এমনটাই বলেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে পুতিন সম্মত হলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো বৈঠকের সময় বা স্থান চূড়ান্ত করেনি। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
রোববার হাঙ্গেরির ইউটিউব চ্যানেল আল্ট্রাহাং-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, “প্রেসিডেন্ট (ভ্লাদিমির) পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড) ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট পুতিন তাতে সম্মতিও দিয়েছিলেন এবং প্রস্তুতির কাজ শুরু করার কথা বলেছিলেন।”
তিনি বলেন, মস্কো এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের জন্য উন্মুক্ত, তবে এই বৈঠকের নিয়ন্ত্রণ ওয়াশিংটনের হাতে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, “আমরা ভদ্র মানুষ। কেউ আমন্ত্রণ জানালে আমরা বলি, হ্যাঁ-কোথায়, কবে এবং কিভাবে, তা ঠিক করি। কিন্তু পরে সেই আমন্ত্রণ বাতিল করা হয়। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বলেছেন- আমন্ত্রণ ‘বাতিল’ মানে আসলে ‘স্থগিত’। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই, যারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।”
ল্যাভরভ জানান, সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তার ফোনালাপে ভালো আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই ফোনকলটি এসেছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টও জানায়, ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে। এতটাই ভালো যে আপাতত নতুন কোনো বৈঠকের প্রয়োজন মনে করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ফলাফল নিয়ে রুবিওর সঙ্গে আলোচনার পর তিনি নতুন কোনো বৈঠক বা কথোপকথনের প্রসঙ্গ তোলেননি। আমিও তুলিনি, কারণ উদ্যোগটা তাদের দিক থেকেই এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে, আমরা সেভাবেই প্রস্তুত।”
ল্যাভরভ জানান, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ভূখণ্ড ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা চলছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন এ নিয়ে ট্রাম্প, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোসহ আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের একটি বাফার জোন দরকার। ইউক্রেন এখনো রুশ ভূখণ্ডে গোলাবর্ষণ, বোমাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এমনকি ব্রিয়ানস্ক, বেলগোরদ ও কুরস্কের মতো অঞ্চলও হামলার শিকার হয়েছে, যেগুলো নিয়ে কখনেই বিতর্ক ছিল না।”
রাশিয়ার লক্ষ্য অপরিবর্তিত বলে উল্লেখ করে ল্যাভরভ বলেন, কিয়েভকে অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হবে, ন্যাটোয় যোগ না দেওয়া, পারমাণবিক অস্ত্র না রাখা এবং রুশভাষীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ল্যাভরভ অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সংলাপকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, “ইউরোপীয় দেশগুলো ও ইউক্রেন এখন নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির পক্ষে চাপ দিচ্ছে। আর এটি রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বাধা হয়ে উঠছে।”
ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়েও তিনি সমালোচনা করেন। ল্যাভরভ বলেন, “এটি ভুল সিদ্ধান্ত। এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।”
টিজে/টিকে