কুমিল্লার চান্দিনায় জামায়াতে ইসলামীর গণমিছিলের বক্তব্যের সময় দলটির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেনের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে চান্দিনা বাস স্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দলের কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির ও সেক্রেটারির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা উত্তর জেলা কমিটির উদ্যোগে গণমিছিলের আয়োজন করা হয়। গণমিছিল শেষে বক্তব্যের সময় দলীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। চান্দিনা বাস স্টেশন এলাকায় আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা উপজেলার নায়েবে আমির ও জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন এর বক্তব্য চলাকালে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, প্রার্থীর হাত থেকে মাইক কেড়ে নেওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় দলের কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির ও সেক্রেটারির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিতে থাকেন।
জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা উপজেলার মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শুরু করলে একটি অংশের নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা অভিযোগ তোলেন, মাওলানা মোশাররফ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এ সময় কয়েকজন কর্মী ‘দল বিক্রি চলবে না’, ‘আওয়ামী দোসর প্রার্থী মানি না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে উভয় পক্ষের কর্মীরা মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দলীয় শৃঙ্খলা কমিটির নেতারা হিমশিম খেয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, মাওলানা মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তপন বকশীর সঙ্গে বৈঠকের ছবি ভাইরাল হচ্ছে এ নিয়ে দলের একাংশে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। তাদের দাবি, জেলা আমির আব্দুল মতিন ও জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। চান্দিনা উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সাজিদ আল আমিন সোহাগ বলেন, জেলা আমির মতিন ও সেক্রেটারি শহীদ টাকা খেয়ে মোশাররফকে প্রার্থী করেছে। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তপন বকশীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর।
জামায়াতে ইসলামীর চান্দিনা উপজেলার নায়েবে আমির ও জামায়াত মনোনীত মাওলানা মোশাররফ হোসেন বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। যার পক্ষে মিছিল হচ্ছে, অন্য পক্ষ তার বিরুদ্ধে মাঠে আছে। আমি কোনো রাজনৈতিক আপস করিনি।
জামায়াতে ইসলামীর কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, চান্দিনায় যে ঘটনাটি ঘটেছে এটি খুবই দুঃখজনক। প্রার্থী মনোনীত হলে সবাই সন্তুষ্ট হবেন বিষয়টি এমন নয়। মতবিরোধ থাকতে পারে তবে যেটি হয়েছে সে বিষয়ে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উপরের মহলে আলোচনা করছি। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি প্রাণ গোপাল দত্ত যখন এমপি ছিলেন, আমাদের মাওলানা মোশারফ সাহেব একজন শিক্ষক। প্রাণ গোপাল যখন এমপি ছিলেন, তখন একজন এমপি যদি একজন শিক্ষককে ডাকেন তখন তিনি তো তার কাছে যাবেন। এতে কি আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে যায়? সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
চান্দিনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ উল ইসলাম বলেন, জামায়াতের দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তেমন অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।