গত মৌসুমে একটার পর একটা এল ক্লাসিকোয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছিল বার্সেলোনা। ঘরোয়া ট্রেবল জেতার পথে লস ব্লাঙ্কোদের প্রতিটি দ্বৈরথেই বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল কাতালানরা। বার্সেলোনার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নেপথ্যে ছিল ১৮ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামালের জাদুকরি ফুটবল। কিন্তু চলতি মৌসুমে প্রথম দেখাতে রিয়ালের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বার্সেলোনা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন ইয়ামাল।
গত রোববারের (২৬ অক্টোবর) এল ক্লাসিকোর পর থেকেই লামিনে ইয়ামালকে নিয়ে সমর্থকদের শঙ্কা দানা বাঁধছে। গত মৌসুমে ব্যালন ডি'অর জয়ের লড়াইয়ে থাকা এই ১৮ বছর বয়সী যে সেদিন মাঠে ছিল সেটা বুঝতেই পারছিল না কেউ। প্রথমার্ধে গোলে শট নেয়া তো দূরের কথা, একবার ড্রিবলিং করে ডি-বক্সে ঢুকতেও দেখা যায়নি তাকে। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল, নিজের সেরা ছন্দে নেই ইয়ামাল।
স্পেনের বিশিষ্ট চিকিৎসক পেদ্রো লুইস রিপোল এবার জানিয়েছেন ইয়ামালের এমন নিষ্প্রভতার নেপথ্যের কারণ। তিনি জানিয়েছেন, ইয়ামাল বর্তমানে কুঁচকির মারাত্মক চোটে ভুগছেন, যার কারণে তিনি নিজের সামর্থ্যের মাত্র অর্ধেক দিয়ে খেলছেন। রিপোলের দাবি, ১৮ বছর বয়সী এই ফুটবলারের শারীরিক সমস্যাটি তার দৌড়ানো ও শট নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে সীমিত করে ফেলেছে।
বার্সার এই কিশোর সেনসেশন পিউবালজিয়া নামক দীর্ঘস্থায়ী কুঁচকির চোটে ভুগছেন, যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তার কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়েছে। এই সমস্যা মূলত জননাস্থির আশেপাশে স্থায়ী ব্যথা সৃষ্টি করে, যা একজন ফুটবলারের চলাচল ও বিস্ফোরণশক্তি বা ‘এক্সপ্লোসিভনেস’কে ব্যাহত করে যেগুলো ইয়ামালের খেলার মূল বৈশিষ্ট্য।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ইয়ামালকে চলাফেরায় সীমাবদ্ধ ও শট নিতে অনিচ্ছুক দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিউবালজিয়ার ব্যথা ওঠানামা করতে পারে, তবে হাইভোল্টেজ ম্যাচগুলোতে তা আরও বেড়ে যায়, ঠিক যেই সময়গুলোতে বার্সেলোনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইয়ামালের সৃজনশীলতার। সাম্প্রতিক সময়ে তার শারীরিক সীমাবদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা বার্সেলোনা ও স্পেন জাতীয় দল উভয়ের মধ্যেই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ক্লাব চিকিৎসকরা নাকি তার অনুশীলন ও ম্যাচ খেলার পরিমাণ সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করছেন, যাতে চোট আরও না বাড়ে।
স্প্যানিশ রেডিও প্রোগ্রাম 'এল লারগুয়েরো'তে কথা বলতে গিয়ে খ্যাতনামা স্পোর্টস ট্রমাটোলজিস্ট ড. রিপোল ইয়ামালের শারীরিক সমস্যার বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেন। তিনি বলেন, 'এটি এমন একটি চোট যা চিকিৎসা করা সত্যিই কঠিন। এই ব্যথা খেলোয়াড়ের দৌড়ানো ও শট নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রায় ৫০% কমিয়ে দেয়, যা আমরা এল ক্লাসিকোতেও দেখেছি।'
তিনি আরও যোগ করেন, 'সে কদাচিৎ গোলমুখে শট নেয়, চলাচলে কষ্ট হয়, বারবার স্ট্রেচ করে... এটি এমন এক অক্ষমতাজনিত ব্যথা যা খেলোয়াড়কে মাঠে থাকতে দেয়, কিন্তু তাকে তার সেরাটা দিতে বাধা দেয় এবং পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলে।'
রিপোল ব্যাখ্যা করেন, এই চোটে হাড় বা জোড়ের কাঠামোগত ক্ষতি না হলেও, এটি সম্পূর্ণ সেরে উঠতে সপ্তাহ কিংবা মাসও লেগে যেতে পারে যদি সঠিকভাবে ম্যানেজ না করা হয়। তার মূল্যায়নেই স্পষ্ট ইয়ামাল এখনো খেললেও, তিনি ফিটনেসের সর্বোচ্চ অবস্থায় নেই।
একই সাক্ষাৎকারে রিপোল রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক দানি কারভাহালের চোট নিয়েও মন্তব্য করেন। ডান হাঁটুর একই জায়গায় আবারো আঘাত পেয়েছেন তিনি, যা গত মৌসুমেও তাকে অনেকদিন বাইরে রেখেছিল। মাদ্রিদ জানিয়েছে, তার হাঁটুতে একটি 'ঢিলা অংশ' রয়েছে অর্থাৎ জোড়ের অভ্যন্তরে হাড় বা তরুণাস্থির ছোট একটি টুকরো আলগা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রিপোল বলেন, 'এটি জোড়ের পৃষ্ঠের একটি টুকরো সাধারণত তরুণাস্থি বা হাড়ের যা আলগা হয়ে জোড়ের ভেতরে অবাধে নড়াচড়া করে। গুরুতর ক্ষেত্রে এটি জোড়কে ব্লক করে দিতে পারে, যা খুবই বিপজ্জনক।'
৩৩ বছর বয়সী কারভাহালের এই পুনরাবৃত্ত চোট মাদ্রিদের ডান দিকের রক্ষণভাগ আরও দুর্বল করে দিয়েছে। ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড (সম্প্রতি চোট থেকে ফেরা) ও ফেডে ভালভার্দে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। এই অনুপস্থিতি স্পেন জাতীয় দলকেও প্রভাবিত করতে পারে, যেখানে কারভাহাল ও ইয়ামাল উভয়েই নিয়মিত সদস্য যা আগামী মাসের আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোর আগে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এমকে/টিএ