ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মাঠপ্রশাসনে বড় পরিসরে রদবদলের উদ্যোগ নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে বদলি নিয়ে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তফসিল ঘোষণার পর আমরাও সেভাবে জানাবো।
ইসি সচিব বলেন, বৈঠকে ভোটকেন্দ্র মেরামত নিয়ে কথা হয়েছে। তারা বলেছে ব্যবস্থা নেবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সুষ্ঠু প্যানেল করতে পারব বলে আশা করি। পার্বত্য এলাকায় হেলিপ্যাড নির্মাণ, ভোটের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সরকারি প্রচারযন্ত্রে প্রচার, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা সহজীকরণ, ঋণখেলাপিদের চিহ্নিতকরণ, বিভিন্ন বাহিনীর সাশ্রয়ী বাজেট, আচরণবিধি প্রতিপালনে পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ, পরীক্ষায় যেন প্রভাব না পড়ে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, মেডিক্যাল টিম গঠন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ১৬ নভেম্বর অ্যাপ উদ্বোধন করবো। এআই নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণার বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমন বিষয় সামনে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনটিএমসি ব্যবস্থা নেবে। আমাদের এখানেও একটা সেল গঠন করা হবে, যেন ভুল তথ্য না যায়।
তিনি বলেন, ভুল তথ্য ভুল প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে যেন বিভ্রান্ত না করা হয়, সঠিক তথ্য প্রবাহটা যেন নিশ্চিত করা হয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাসহ অন্যান্য যে শৃঙ্খলা, যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এটা রেগুলার পদ্ধতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে।
আখতার আহমেদ বলেন, মাঠপর্যায়ে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি হবে। বর্তমানে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজস্ব প্রক্রিয়ায় এ নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হবে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের গেজেটে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ইসি জানিয়েছিল, বিধিমালায় না থাকায় ‘শাপলা’ প্রতীক কোনো দলকে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘কিছু কিছু প্রতীক নিয়ে মন্তব্য এসেছে- কেন রাখা হলো বা না রাখলে ভালো হতো কি না। এসব বিবেচনায় কমিশন আগের তালিকায় পরিবর্তন এনেছে। আগে প্রতীকের সংখ্যা ছিল ১১৫টি। এর মধ্যে ১৬টি প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন প্রতীক যুক্ত করে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৯টি।’
এক প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, কমিশন মনে করেছে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক রাখা যেতে পারে। এটি কোনো দলের দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এনসিপি ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়েছিল, তবে ‘শাপলা’ ও ‘শাপলা কলি’র মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যা ব্যাখ্যার প্রয়োজন বলে মনে করি না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘কিছু প্রতীকের বিষয়ে বিরূপ মতামত আমাদের কানে এসেছে। কমিশন মনে করেছে, কিছু প্রতীক বদলানো বা সংযোজন করা প্রয়োজন। তাই বিরূপ সমালোচনার প্রেক্ষাপটে কিছু প্রতীক বাদ এবং কিছু নতুন প্রতীক যুক্ত করে সংশোধনী করা হয়েছে।’
হ্যান্ডশেকের মতো প্রতীক যুক্ত হয়েছে- এ প্রসঙ্গ ইসি সচিব বলেন, কমিশন যেটা মনে করেছে নতুন প্রতীক এভাবে দেওয়া যেতে পারে, সেটা দেওয়া হয়েছে। যদি বলেন এটা কেন করা হলো, ওটা কেন করা হলো না, এর জবাব তো মুশকিলের ব্যাপার।
আটটা দল নভেম্বরে গণভোট চেয়েছে- কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের বক্তব্য শুনেছি। তারা নভেম্বরে গণভোট চান আমরা শুনেছি। আপনারা জানেন পরশুদিন বোধহয় পেপারে হেডলাইন ছিল, যেটা সরকার সিদ্ধান্ত দেবে।
প্রতিদিন কমিশনে বিভিন্ন দল আসছে তাদের দাবি নিয়ে, এটা কি আপনারা চাপ মনে করছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে তিনটা মূল ধারা। একটা হচ্ছে রাজনৈতিক দল, ভোটার এবং নির্বাচন কমিশন। কাজেই এই তিনটা মেইন স্ট্রিম একটা আরেকটার সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করতেই আসবে। এর অর্থ এই না যে, আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেই আমরা চাপের মধ্যে আছি। এটা চিন্তা করাটা আমি মনে করি অত্যন্ত অমূলক।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
টিজে/টিএ