দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে দখলমুক্ত হলো রাজধানীর নিকুঞ্জ-২ টানপাড়ার জামতলা রোড।
ভাসমান হকার ও দখলদারদের আগ্রাসী অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে নাকাল এলাকাবাসী সচেতন নাগরিক ও স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে রাস্তাটি পুনরুদ্ধার করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এই সফল অভিযানের ফলে জনচলাচলে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং প্রমাণ হলো যে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়।
দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান:
নিকুঞ্জ-২ এর টানপাড়ার গুরুত্বপূর্ণ জামতলা রোডটি দীর্ঘদিন যাবৎ ভাসমান হকার ও কিছু দখলবাজদের কবলে নিমজ্জিত ছিল। রাস্তার বিশাল অংশ অবৈধ স্থাপনা ও দোকানের দখলে থাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছিল। পথচারী, বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দখলদারদের বহুবার মৌখিকভাবে অনুরোধ, এমনকি অনুনয়-বিনয় করা হলেও তারা রাস্তাটি দখলমুক্ত করতে রাজি হননি। তাদের এই একগুঁয়ে মনোভাবের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
জন-উদ্যোগে অভূতপূর্ব সাফল্য:
এই পরিস্থিতিতে দুর্ভোগের শিকার এলাকাবাসী আর বসে না থেকে খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটি-র সঙ্গে একত্রিত হয়ে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। গত বুধবার (তারিখটি প্রয়োজন হলে উল্লেখ করা যেতে পারে) এলাকাবাসী ও সোসাইটির সমন্বয়ে একটি বিশেষ 'দখলমুক্তি গ্রুপ' গঠন করা হয়। এই জন-উদ্যোগে নেতৃত্ব দেন খিলক্ষেত টানপাড়া কল্যাণ সোসাইটির আহ্বায়ক জাহিদ ইকবাল।
তিনি জানান, "মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দেখে আমরা আর চুপ থাকতে পারিনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এবার সম্মিলিতভাবেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।"
২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ও সফল উচ্ছেদ:
বিশেষ গ্রুপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দখলদারদের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হয়। শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও, কার্যকর পদক্ষেপের প্রস্তুতি ছিল জোরালো।
আল্টিমেটামের ফলশ্রুতিতে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জামতলা শেষ মাথা থেকে বটতলা পর্যন্ত সমগ্র রাস্তায় কঠোর নজরদারি রাখা হয়।
* কোনো ভাসমান হকারকে বসতে দেওয়া হয়নি।
* অবৈধভাবে স্থাপিত নানা স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ করা হয়।
এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই অভিযানটি সম্পূর্ণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এই সাহসী পদক্ষেপের কারণে সমগ্র এলাকা এখন দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন।
ফিরে এলো শান্তি ও স্বস্তি:
জামতলা রোড দখলমুক্ত হওয়ার পর সমগ্র এলাকায় এক শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে। জনচলাচলে আর কোনো বাধা নেই। পথচারীরা এখন নির্বিঘ্নে রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেন। এটি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের বহুল প্রত্যাশিত আশা পূরণ করলো।
সোসাইটির পক্ষ থেকে বলা হয়, "এই বিজয় শুধুমাত্র জামতলা রোডের নয়, এটা জনশক্তির বিজয়। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে কেউ আর এই রাস্তা দখলের সাহস করবে না। প্রয়োজনে আমরা আবারও ঐক্যবদ্ধ হব।"
এলাকাবাসীর এই গঠনমূলক উদ্যোগ অন্যান্য স্থানেও দখলমুক্তির জন্য অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা করা যায়।
লেখক : জাহিদ ইকবাল
সিনিয়র সাংবাদিক ও সমাজসেবক।