ডিক চেনির মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি: জর্জ ডব্লিউ বুশ

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তার প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “তার মৃত্যু জাতির জন্য এক বড় ক্ষতি এবং বন্ধুদের জন্য গভীর বেদনার বিষয়।”

চেনি স্থানীয় সময় গত সোমবার রাতে নিউমোনিয়া এবং হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর জটিলতায় ৮৪ বছর বয়সে মারা যান বলে পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাইস প্রেসিডেন্টদের একজন হয়ে উঠেছিলেন ডিক চেনি। বিশ্বজুড়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর কারিগর এবং ২০০৩ সালের ইরাক আগ্রাসনের প্রবল সমর্থক হিসেবেও তিনি বিতর্কিত হয়ে ওঠেন।

বুশ বলেন, “ইতিহাস তাকে তার প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্মরণ করবে।”

তিনি আরও বলেন, “চেনি ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক, যিনি সততা, প্রজ্ঞা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রতিটি দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তার সৎ ও স্পষ্ট পরামর্শের ওপর নির্ভর করতাম এবং তিনি কখনো ব্যর্থ হননি। তিনি তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন এবং আমেরিকান জনগণের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।”

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনডোলিজা রাইস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে লিখেছেন, “আমি তার সততা এবং দেশপ্রেমের জন্য তাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণাদায়ী এক মানুষ ও অসাধারণ পরামর্শদাতা। তিনি আমাকে জনসেবার প্রকৃত মানে শিখিয়েছেন।”

ডেমোক্র্যাট পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও আমি সবসময় তার নিষ্ঠা ও কর্তব্যবোধকে সম্মান করেছি।”

বিবিসি বলছে, দীর্ঘদিন রিপাবলিকান দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে দলটির কঠোর সমালোচকে পরিণত হয়েছিলেন চেনি। ট্রাম্প অবশ্য এখনো চেনির মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করেননি, তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি খবরটি জানেন।

রিপাবলিকান প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, “ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, যার সম্মান প্রাপ্য, তাকে সম্মান দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও তার ত্যাগ ও সেবাকে সম্মান জানাতেই হবে।”

এদিকে চেনির মৃত্যুর ঘোষণার পর মঙ্গলবার সকালে হোয়াইট হাউসের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

১৯৪১ সালে নেব্রাস্কার লিংকনে জন্মগ্রহণ করেন রিচার্ড “ডিক” চেনি। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। পরে ওয়াইওমিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন চেনি।

১৯৬৮ সালে তরুণ রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান উইলিয়াম স্টেইগারের সহকারী হিসেবে ওয়াশিংটনে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের চিফ অব স্টাফ হন তিনি। এরপর এক দশক প্রতিনিধি পরিষদে কাজ করেন।

জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ১৯৯০-৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযানের তত্ত্বাবধান করেন। ২০০১ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন চেনি এবং অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করেন।

এ কারণেই তিনি মার্কিন রাজনীতিতে একদিকে সর্বাধিক প্রভাবশালী, অন্যদিকে সবচেয়ে বিতর্কিত নেতাদের একজন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আরপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ Nov 05, 2025
img

প্রেস সচিব

এয়ার ফোর্সের সব প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ঢাকার বাইরে পরিচালনার সুপারিশ Nov 05, 2025
img
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা Nov 05, 2025
img
অপরাধে জড়ালে জামিনপ্রাপ্ত আ. লীগ কর্মীদের কঠোর ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 05, 2025
img
মাঠ থেকে কেন সরানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর ৫০% সদস্য, জানা গেল কারণ Nov 05, 2025
img
চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ Nov 05, 2025
img
বিএনপি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক : মাসুকুল রাজীব Nov 05, 2025
img
নিউজিল্যান্ডকে ৭ রানে হারালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ Nov 05, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ছিল একটি দলকে সুবিধা দিতে: অ্যাটর্নি জেনারেল Nov 05, 2025
img
পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারলেন না সালাহউদ্দিন Nov 05, 2025
img
নির্বাচনে জামায়াত কোন জোট গঠন করবে না: ডা. শফিকুর রহমান Nov 05, 2025
img
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের কারণ জানা গেল Nov 05, 2025
img
আমার রাজনৈতিক জীবনের অপমৃত্যু অকালে ঘটে গেলো: পাপিয়া Nov 05, 2025
img
বিএনপির রাজনীতির মধ্যে রংধনু রয়েছে: এ্যানি Nov 05, 2025
img
সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭৪৮ Nov 05, 2025
img
ভারতে যাত্রীবাহী ট্রেন-মালগাড়ি সংঘর্ষে নিহত ১০ Nov 05, 2025
img
মালদ্বীপে এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম নিয়ে মতবিনিময় সভা Nov 05, 2025
img
মামদানিকে শুভেচ্ছা জানালেন বলিউডের তারকারা! Nov 05, 2025
img
জকসু নির্বাচন ২২ ডিসেম্বর Nov 05, 2025
img
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য জামায়াতের দুই সদস্যের কমিটি গঠন Nov 05, 2025