যে কোনো ইস্যুতে বরাবরই সরব সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। প্রতিবাদী গান কবিতায় সবসময় মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যায় তাকে।জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও ছিলেন সামনের সারিতে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও অন্যায় অবিচারে নিজের কণ্ঠ জারি রেখেছেন এই শিল্পী।
তবে এই শিল্পী এবার কথা বললেন অন্য প্রসঙ্গে। সদ্য নিউ ইয়র্কের মেয়র পদে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া ৩৪ বছর বয়সী তরুণ জোহরান মামদানিকে নিয়ে নিজের আশার কথা শেয়ার করলেন সমাজমাধ্যমে।
নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে একাধিক দিক থেকে নতুন রেকর্ড গড়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারপুত্র জোহরান মামদানি। এরমধ্য দিয়ে প্রথম মুসলিম মেয়র পেল নিউ ইয়র্ক শহর! আর এ প্রসঙ্গটিতেই কথা বললেন সায়ান।
বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন,“জোহরান মামদানির নিউ ইয়র্ক শহরে মেয়র ভোটের বিজয় আমাকে অনেক আশা দিয়েছে। তিনি তার অনেক পরিচয়ের ভেতরে মুসলমান পরিচয়কেও সামনে এনেই তার রাজনীতি করেছেন। এটাও খুব শক্তিশালী।”
এসময় সায়ান বলেন,“আশা আর নিরাশার মধ্যেই মানুষ হিসেবে আমাদের যাত্রা করে যেতে হবে। নিরাশা আছে, কিন্তু আমি নিরাশার প্রচারক হবো না। যদি হই, তবে আশা হতে চাই।”
জোহরানের প্রসঙ্গ টেনে এসময় সায়ান বলেন,“আমিও মুসলমানের মেয়ে এবং আমি এরকমই মুসলমান থাকবো। কোন অবস্থাতেই, কোন যুক্তিতেই আমি পৃথিবীর আর কোন মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ঘৃণা করতে রাজি না। তাকে আমার চেয়ে ছোট এবং নিজেকে কারোর চেয়ে বড় ভাবতে রাজি না। কোন অবস্থাতেই না। আমার মুসলমানীত্বকে এইটুকু উচ্চতায় যেতেই হবে। প্রতিটি উচ্চারণ হতে হবে সকল মানুষের সমান মর্যাদার পক্ষে।
আমার চাওয়াটা, আমার বিশ্বাসটা এর চেয়ে কম হলে আমি নিজেকে সাধারণ কোন ভালো মানুষ হিসেবেও স্বীকার করি না। ‘আশরাফুল মাখলুকাত তো দূর কি বাত!’”
“আজকের পৃথিবীর মানুষ হতে হলে, নিজের কাছে আমার এটুকু নূন্যতম প্রত্যাশা। এটাই আমার শিল্প, এটাই আমার রাজনীতি, এটাই আমার ধর্ম।
আজকের আনন্দকে দেখেও না দেখার ভান করে, আজকের অন্যায়কে দেখেও না দেখার ভান করে, কিছুই অনুভব না করে, কপটতায় সব কিছুর উর্ধ্বে থাকতে চেয়ে, শুধু শুধু মিছিমিছি ফুল পাখির গান গাওয়ায় আমি সুখ পাই না। সেই পানসে গানে মজা নাই কোন। আমি তেমনই কোন শিল্পী হতে চাই প্রতিদিন, যার প্রতিটি উচ্চারণে আজকের মঙ্গলের আর প্রতিরোধের কথা থাকবে, আজকের রাজনীতির কথা থাকবে, আজকের মানুষের কথা থাকবে, আজকের পাখির কথা থাকবে, আর এই সমস্তটা মিলিয়ে যে চর্চা, সেটাই আমার কাছে সত্য এবং সুন্দরের চর্চা, আমার রাজনীতি আর ধর্মের চর্চা। সেটাই আমার শিল্প। সেটাই আমার রাজনীতি।” বলেন সায়ান।
সায়ান বলেন,“জোহরান মামদানির আজকের বিজয়কে আনন্দে উদযাপন করি, অনুপ্রাণিত হই। এই বিজয় আমার উপরেও আরো গভীর দায়িত্ব আরোপ করে । একটা ন্যায্য পৃথিবীর জন্য আমাদের প্রত্যেককেই তাদের সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে যার যার জায়গাতে কাজ করতে হবে। চুপচাপ না থেকে আমি একটা পরিস্কার পক্ষ অবলম্বনে বিশ্বাসী। প্রতিটি ঘৃণার উচ্চারণে আমি নীরব দর্শক হবো না। আমি একটি প্রেমের কবিতা পড়বো।হাজারবার ভালোবাসার কথা বলবো, এটাই আমার প্রতিরোধ, এটাই আমার শিল্প।”
সবশেষে সায়ান বলেন,“কেউ যদি একজন অন্য ধর্মের মানুষকে অপমান করে, আমি ১০০-জনকে বুকের ভেতরে টেনে নেবো। এটাই হতে হবে আমার ধর্ম এবং আমার শিল্প। এটাই আমার রাজনীতি। এটাই আমার শিল্পী হিসেবে কর্তব্যও বটে। স্পষ্ট করেই বলবো, আমি ঘৃণার পক্ষে নাই। আমি জানি আমি একলা নই। আমরা অনেক। আমি ভালোবাসা দিয়েই মানুষের রাজনীতি করবো। আমি ভালোবাসা দিয়েই বিভাজনের রাজনীতিকে পরাজিত করবো। এটা আমার সাধনা। এটা আমার লড়াই । এটাই আমার পথ।”
এমআর