জনগণের মতো সেনাবাহিনীও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়

সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতি সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের সেনা সদস্যের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে বলে মন্তব্য করে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেছেন, সেনাবাহিনী আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ এখন আরো বেশি। প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে, যেটা দুঃখজনক।

আমরা সত্য দিয়েই তা প্রমাণ করতে চাই। মিথ্যাকে বিতাড়িত করতে সত্য প্রতিষ্ঠাই যথেষ্ট। নির্বাচনের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা আরো ভালো হবে, দেশ স্থীতিশীল পর্যায়ে যাবে এবং সেনাবাহিনীও ব্যারাকে ফিরবে। গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টায় বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাবাহিনীর ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, ‘যে দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে তেমন কিছু করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি না। মিথ্যাকে বিতাড়িত করতে সত্য প্রতিষ্ঠাই যথেষ্ট। আমরা সত্য দিয়েই তা প্রমাণ করতে চাই।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের মতো সেনাবাহিনী চায় বর্তমান সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আশা করি, দেশের আইন-শৃঙ্খলা আরো ভালো হবে এবং দেশ স্থীতিশীল পর্যায়ে যাবে। তখন আমরা সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারব। সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী আমরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে।

নির্বাচনে আমাদের কী করণীয়, সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ করছি। তবে প্রশিক্ষণের সঙ্গে আমাদের যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া হয়, গত ১৫ মাস আমরা মাঠে কাজ করছি, নির্বাচন পর্যন্ত বা তার পরও কিছুদিন আমাদের মাঠে থাকতে হতে পারে, এতে প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে।

গত ১৫ মাস প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে। আমরাও চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি।’

আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর যে আবেগের প্রকাশ ঘটানো যায়নি, তার একটি বহিঃপ্রকাশ তো আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক মেশিনারিজ তখন কিছুটা হলেও অকার্যকর হয়ে পড়েছিল, এটা বাস্তবতা। এমন পরিস্থিতিতে (দ্রুত আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি) আশা করা যায় না। সেনাবাহিনী এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা মোকাবেলা, সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া (বিক্ষোভ সামলানো), পুলিশ স্টেশন (রক্ষা করা) ও ট্রাফিক দায়িত্ব পালনসহ এমন কোনো কাজ নেই যা সেনাবাহিনী করেনি। ৪০ বা ৫০ হাজার সেনা সদস্য, যাঁদের প্রাথমিক কাজ এটা না। তবে তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছেন।’

সীমান্তে ভারতের সামরিক মহড়া বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের তেমন চিন্তা করার কিছু নেই। এটা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সীমান্তবর্তী অন্য কয়েকটি দেশ নিয়ে তাদের (ভারত) চিন্তা করতে হয়। প্রয়োজন হলে আমরাও মহড়া ও অনুশীলন করি।’

দেশে অস্ত্র প্রবেশ ও উদ্ধার নিয়ে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারকে ভিন্নভাবে চিন্তা করলে ভালো হয়। বান্দরবানে কুকি চীন ধীরগতিতে চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অস্ত্র এলে তা ঢাকামুখী হবে—এ বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। অন্য যে জায়গাগুলো থেকে ঢাকামুখী অস্ত্রের চালান ধরা পড়েছে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া দেশে চাঁদাবাজি রোধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেব। তবে দেশে আমরাই একমাত্র বাহিনী না, নিশ্চয়ই অন্যরাও একই কাজ করবে। আমাদের এমন প্রস্তুতি রাখতে হবে, যেন এসব অস্ত্রের চালান ঢাকায় না আসতে পারে। যদি কিছু আসে, সেটা যেন আমরা মোকাবেলা করতে পারি।’

সংবাদ সম্মেলনে গুমের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের অধীনে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রসঙ্গে সেনা সদরের এজি শাখার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আর্মি আইন ও আইসিটি অ্যাক্ট এই দুটি বিশেষ আইন। আইন দুটিকে আমরা কখনো মুখোমুখি দাঁড় করাব না। আইসিটি অ্যাক্টের অধীনে মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে। আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমরা চাই সরকার স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার করবে। যাঁরা গুম-খুনের শিকার তাঁদের পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। একই সঙ্গে আমাদের যাঁরা অফিসার (মামলার আসামি) আছেন, তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন আছি। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে যথাযথ আইনি নির্দেশনা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি, আশা করছি সুষ্ঠু পথে এগোতে পারব।’

সংবাদ সম্মেলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে মোতায়েন থাকা সেনাবাহিনীর অর্ধেক সদস্যকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (এমওডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেন বলেন, প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী আমরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্রাম ও নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য বুধবার থেকে এই সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করা হবে। প্রশিক্ষণ ও বিশ্রামের পর তাঁরা ধাপে ধাপে পুনরায় মোতায়েন হবেন এবং বাকি সদস্যদের প্রতিস্থাপন করবেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনজুর বলেন, গত ১৫ মাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। এর পাশাপাশি, চুরি যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ৮১ শতাংশ খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও ৭৩ শতাংশ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং, ডাকাত ও চাঁদাবাজসহ ১৯ হাজারের বেশি সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সময় এসেছে রাজনৈতিকভাবে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার: স্নিগ্ধ Nov 06, 2025
img
ক্রিকেটে রাজনীতি পছন্দ করি না : ওয়াসিম আকরাম Nov 06, 2025
img
খুশি কাপুর-কারিশ্মা তান্না জুটিতে নতুন দিগন্তে “মা ২” Nov 06, 2025
img
বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে মুখ খুললেন রেজা কিবরিয়া Nov 06, 2025
img
ডিসেম্বরে নামতে পারে প্রথম শৈত্যপ্রবাহ Nov 06, 2025
img
২৩ হাজার কোটি টাকার চেলসিকে রুখে দিল কারাবাগ Nov 06, 2025
img
সিসি ক্যামেরা যুক্ত থাকা ভোটকেন্দ্রের তালিকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন Nov 06, 2025
img
৫ দফা দাবি নিয়ে যমুনায় যাবে জামায়াতসহ ৮ দল Nov 06, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে ৯ম দিনের আপিল শুনানি চলছে Nov 06, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতির মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা Nov 06, 2025
img
নির্বাচনকে সামনে রেখে জরাজীর্ণ ভোটকেন্দ্র সংস্কারে তথ্য চায় ইসি Nov 06, 2025
img
সংগীত নয়, আপাতত সিনেমাতেই মনোযোগ আয়ুষ্মান খুরানার Nov 06, 2025
img
ইউনূস সরকার রীতিমতো অপরাজনীতি করছেন : জাহেদ উর রহমান Nov 06, 2025
img
বিদেশিদের হয়রানি বন্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার হাইকোর্টে রায় Nov 06, 2025
img
জোহরান মামদানিকে ট্রাম্পের কড়া বার্তা Nov 06, 2025
img
করুরের ট্র্যাজেডির ১ মাস পর মুখ খুললেন থালাপতি বিজয় Nov 06, 2025
img
দূষিত শহরের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান ৯ম Nov 06, 2025
img
টানা পাঁচ ফ্লপের পর শ্রীলীলার ক্যারিয়ার সঙ্কটে Nov 06, 2025
img
মাদ্রাসায় পড়ার সময়টা জীবনের সবচেয়ে ভালো মুহূর্ত ছিল: কেয়া পায়েল Nov 06, 2025
img
পুরোনো গানে নতুন নায়িকাকে নিয়ে জুটি বাঁধলেন অক্ষয় কুমার Nov 06, 2025