আগামীর বাংলাদেশও তরুণদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে : জামায়াত আমির

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নেতাদের জাতির স্বপ্নসারথি হিসেবে ইতিবাচক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশও তরুণদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল “দুর্বার নেতৃত্বে গড়ি স্বপ্নের ক্যাম্পাস”।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, আর সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।



প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বহু বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় নির্বাচনব্যবস্থা ছিল অচল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে। ছাত্রসংসদের প্রতি জাতির অনেক প্রত্যাশা- তোমাদের হাত ধরেই দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। তোমাদের জাতির স্বপ্নসারথি হতে হবে।

তিনি বলেন, ডাকসু, জাকসু, চাকসু ও রাকসুর মতো আগামীর বাংলাদেশও তরুণদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ আমাদের সবার কাম্য। এই ছাত্রসংসদগুলোই তার প্রমাণ দিচ্ছে।

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকে নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক এক্সিলেন্স, গবেষণা, জ্ঞানচর্চা ও সততার পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করবে। গতানুগতিক সংস্কৃতির বাইরে এসে ভবিষ্যতের বৃহৎ নেতৃত্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তোমরা যেমন নেতৃত্বে থেকে জগদ্দল পাথর সরিয়ে দিয়েছ, তেমনি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে সহযোগিতা করবে।

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচন ছিল ছাত্রসমাজের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত। এটি ছিল জুলাই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ইসলামী ছাত্রশিবির বরাবরই ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার থেকেছে ও আন্দোলন করেছে।

তিনি বলেন, ছাত্রসংসদ শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ হবে না, বরং এটি হবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রশিক্ষণক্ষেত্র। এই নেতৃত্বই আগামী দিনে দেশের গতিপথ ও নীতিনির্ধারণ করবে। প্রতিনিধিরা কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতিনিধি নয়; বরং সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কাজ করবে। সকল ক্যাম্পাসে ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি থাকতে হবে। প্রত্যেক প্রতিনিধিকে সবার নেতা হয়ে উঠতে হবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, আমরা তখনও পুরোনো ব্যবস্থায় আটকে আছি। বিশ্বের বিভিন্ন ছাত্রসংসদ সম্পূর্ণ শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক। আমরাও এমন শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্রসংসদ চাই, যা বৈচিত্র্যময় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে মডেল হয়ে উঠবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার চর্চা করতে চাই না, বরং একে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে চাই। জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও নতুন জ্ঞান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রশিবির মনে করে, ছাত্রবান্ধব কর্মসূচির পাশাপাশি জাতীয় সংকটের মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে।



ছাত্রশিবির সভাপতি তার বক্তব্যে জুলাই শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের অবদান স্মরণ করেন এবং ডাকসু নির্বাচনের খবর সংগ্রহের সময় স্ট্রোকে মারা যাওয়া সাংবাদিক তারিকুল ইসলাম শিবলী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যুবরণ করা শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সাবেক চাকসু ভিপি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।

ছাত্রসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, জাকসু ভিপি আবদুর রশিদ জিতু, চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি, রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, জাকসুর এজিএস আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা এবং রাকসুর নির্বাহী সদস্য সুজন চন্দ্র।

অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- ফ্যাসিবাদী আমলে গুম হওয়া ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান, জুলাই শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মাতা কোহিনূর আক্তার, জুলাই যোদ্ধা তাহমিদ হুজায়ফা, জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রহমান ফারুকী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা এবং খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল আজিজ।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল কৃষকদলের দুই নেতার Nov 08, 2025
img
শাটডাউনে হাজারো ফ্লাইট বাতিল যুক্তরাষ্ট্রে Nov 07, 2025
img
গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে : গোলাম পরওয়ার Nov 07, 2025
img
জগন্নাথের ১৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে নৌকাডুবি Nov 07, 2025
img
নিজেদের ভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি: সন্দীপ্তা সেন Nov 07, 2025
পিতা মাতার প্রতি ছেলের কর্তব্য | ইসলামিক জ্ঞান | Nov 07, 2025
ফেলানি নিয়ে মুক্তি পেল জাতীয় নির্বাচনের দ্বিতীয় টিজার Nov 07, 2025
প্রস্তুত ইসি, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন Nov 07, 2025
আ.লীগ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বললেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ Nov 07, 2025
img
শ্বাসনালীর সংক্রমণে মাঠের বাইরে পাথিরানা Nov 07, 2025
img
মুক্তি পেয়েছে জাতীয় নির্বাচন-২০২৬ এর দ্বিতীয় টিজার Nov 07, 2025
img
থালাপতি বিজয়ের ‘জানা নায়াগন’ ৯ জানুয়ারি বড় পর্দায় মুক্তি Nov 07, 2025
img
চট্টগ্রামে অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করল চসিক Nov 07, 2025
img
দল বাড়ছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে Nov 07, 2025
img
ডেটিং অ্যাপ ‘হিংজ’-এর মাধ্যমে দুয়াজির সঙ্গে পরিচয় হয় মামদানির Nov 07, 2025
img
বিএনপি নেতা রিজভীর পা ধরে সালাম করা সেই পুলিশ ক্লোজড Nov 07, 2025
img
সাভারে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল এক বৃদ্ধের Nov 07, 2025
img
ইয়ামাল ও ফোরনালসকে দলে ফিরিয়ে স্কোয়াড ঘোষণা স্পেনের Nov 07, 2025
img
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে : সাইফুল হক Nov 07, 2025
img
কিছু দল ভোটের আগে ওয়াদা দিলেও পরে তা রাখে না : জামায়াত আমির Nov 07, 2025