রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখায় তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। একই সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারা প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর যে সুপারিশ করেছে, তাতে নানা বিষয়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে। তারা (দলগুলো) কখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন করপোরেশনের (মহল) বিভিন্ন স্বার্থকে রক্ষা করে।
সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছেন লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে না। কোনো গণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও না। নারীদের সঙ্গে করেছে? করেনি। তো কার সঙ্গে করেছে?
অন্তর্বর্তী সরকার এবং ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফরহাদ মজহার বলেন, সাংবিধানিকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ। এ সরকারের কোনো এখতিয়ার নেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তৈরি করার। এ সরকারের কোনো এখতিয়ারই নেই কোনো কমিশন তৈরি করার। কারণ, এটা ইলিগ্যাল গভর্নমেন্ট।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সংবিধানে যদি আপনি শপথ করেন, আপনি রক্ষা করেন, তাহলে এটা রক্ষা করতে হবে। এটাকে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, সংস্কার করতে পারবেন না।
ফরহাদ মজহার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর উচিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য অথবা শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ নেওয়া। সেটা না করে তারা মারাত্মক ভুল করেছে।
এ সময় গোলটেবিল আলোচনায় ফরহাদ মজহারের পাশে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ভুল স্বীকার করে বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে উঠে গেছেন। তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে। আমাদের অগ্রজেরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।
সেই ভুল শুধরে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ৫ আগস্ট আমরা ভুল করেছি। তো কী হয়েছে? আমরা আবার ঠিক করব। বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল করতে দ্রুত সময়ে গণপরিষদ গঠন করার পরামর্শ দেন তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছিল তখনই ফরহাদ মজহার তার সমালোচনা করেছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এ বৈঠকে অংশ নেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন।
আইকে/ টিএ