অভিজিৎ সেনের ‘প্রজাপতি ২’-এর শুটিং, ডাবিং শেষ। প্রকাশ্যে ছবির টিজ়ার। মিঠুন চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী হয়ে দেব! অনুমেঘা কাহালি বুঝি ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল বিগ স্টার’! টলিউড থেকে সাধারণ দর্শক শিশুশিল্পীকে নিয়ে প্রচণ্ড কৌতূহল।
কৌতূহলী সংবাদমাধ্যমও। যেমন, অনুমেঘা এখন কী করছে? পড়াশোনা করতে ভালবাসে? কোন বিষয় ওর প্রিয়? দেবের সঙ্গে লন্ডনে গিয়ে কী কী করেছে একরত্তি?
দেবের সঙ্গে লন্ডনে শুটিংয়ে অনুমেঘা।
এই প্রশ্ন নিয়ে ফোনে তার সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম। বার্ষিক পরীক্ষা নতুন বছরে। তার আগে সেমেস্টারের পরীক্ষা চলছে। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। মা ঋতুপর্ণা কাহালির ডাকে ঘুম ভাঙলেও কণ্ঠস্বর ঘুমজড়ানো। হাই তুলতে তুলতে বলল, “ইংরেজি আমার প্রিয় বিষয়। পড়তে ভাল লাগে।” ইংরেজি বেশি প্রিয় না দেব? অভিনেতা ওকে কোলে নিয়ে ঘুরেছেন। চকলেট কিনে দিয়েছেন। বিদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। কথা শেষের আগেই জবাব তৈরি। বলল, “হ্যাঁ, দেব আঙ্কল ভাল তো। খুবই ভালবাসে আমায়। খেলা করেছে। কিন্তু ইংরেজির মতো নয়।” ফোনের ও পারে শিশুশিল্পীর মায়ের কণ্ঠে হাসির আভাস।
এত ছোট থেকে অভিনয়। শৈশবের আর কী অবশিষ্ট থাকল? প্রশ্ন ছিল শিশুশিল্পীর মায়ের কাছে।
মেয়ের ছেলেবেলার সঙ্গে তাঁদের কোনও আপস নেই, জানাতে একটুও দ্বিধা করলেন না ঋতুপর্ণা। সাফ বললেন, “ওর উত্তর শুনে মনে হল, শিশুসুলভ মন নষ্ট হয়ে গিয়েছে? আমার মেয়ে মিঠুন চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আর দেবের নামটুকুই জানে। আর জানে ও ওদের সঙ্গে কাজ করে। শুটিং ওর একটা কাজ। ব্যস, এর বাইরে কিচ্ছু না। ওই জন্যই একের পর এক কাজ করতে দিই না। বেছে কাজ করাই। ফটোশুট, মাচা শো-তে পাঠাই না। মেয়ে ভালবাসে না বলে।” একটু থেমে এ-ও যোগ করেছেন, “ছোট থেকে মিমিক্রি করতে ভালবাসে। ধারাবাহিক বা কারও কোনও অভিনয় একবার দেখেই হুবহু অনুকরণ করতে পারত। আর নাচ।” স্কুলে এমনও হয়েছে, অনুমেঘার সংলাপ বলার দক্ষতা তাকে নাচের অনুষ্ঠান থেকে সরিয়ে নাটকে সুযোগ করে দিয়েছে! তখনই ঋতুপর্ণার মনে হয়েছে, মেয়ে যা ভালবাসে সেটা করতে দিলে কেমন হয়?
তাই গান বা খেলাধুলোর বদলে অভিনয়ে অনুমেঘা। প্রথমে ছোটপর্দায় কাজ। সেখান থেকে পরিচালক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের ধারাবাহিক ‘বোধিসত্ত্বর বোধবুদ্ধি’তে অভিনয়। শিশুশিল্পীকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘মিঠাই’-সহ একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছে তাকে। সুমন ঘোষের ‘কাবুলীওয়ালা’ ছবিতে ‘মিনি’ সে। কখনও ‘স্বার্থপর’ ছবিতে কোয়েল মল্লিকের ছেলেবেলা। সিরিজ় ‘অ্যাডভোকেট অচিন্ত্য আইচ’ বা ‘রান্নাবাটি’ ছবিতে ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে। শকুন্তলা বড়ুয়া, দেবশ্রী রায়, অপরাজিতা আঢ্য, সোহিনী সরকার, সৌমিতৃষা কুণ্ডু-সহ অনেক অভিনেত্রীর খুব আদরের।
কোন ‘আঙ্কেল’ বেশি ভাল? না কি ‘আন্টি’রা? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছে অনুমেঘা। তার পর সরল জবাব, “আঙ্কেল আর দিদিরা ভাল। ওরা পড়তে বলে না। খেলে আমার সঙ্গে। দুষ্টুমি করে। আন্টিরা খালি পড়তে বলে।” এত শুটিং। অনুমেঘা তা হলে পড়ে কখন? “কেন শুটিংয়ের ফাঁকে! সুযোগ পেলেই মা পড়তে বসিয়ে দেয়”। গলায় কি অভিমানের মেঘ জমল তার! ভুল ভাঙিয়ে দিলেন ঋতুপর্ণা। শিশুশিল্পীর মায়ের দাবি, পড়াশোনায় কোনও ‘অ্যালার্জি’ নেই। ভালবাসে পড়তে। টানা শুটিং পড়লে স্কুলের জন্য মনখারাপও করে অনুমেঘার। আর শুটিং ফুরোলে অভিনেতার জন্য! “মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে এত ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে শুটিং শেষ হতে দু’জনেরই মনখারাপ। বাকি সকলের সঙ্গেও একই ঘটনা। বিশ্বনাথ বসু যেমন ওকে ‘মেয়ে’ ডাকেন। দু’দিন চুপচাপ থাকে। আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।”
ঋতুপর্ণা এ-ও জানিয়েছেন, পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না বলেই এখনও পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল খারাপ নয়।
শুটিংয়ের কারণে পড়তে না পারলে স্কুলও নিশ্চয়ই বিবেচনা করে? তারকা ছাত্রী যখন!
অনুমেঘার মায়ের দাবি, “কোনও বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয় না। কোনও পরীক্ষায় খারাপ করলে স্কুল থেকে শিক্ষিকারা সরাসরি জানিয়ে দেন।” ঋতুপর্ণার মতে, “অনুমেঘাকে তারকাসুলভ হাবভাব করতে দিই না আমরা। ওসব বোঝে না ও। স্কুলশিক্ষিকা এবং বাকি পড়ুয়ারা অবাঙালি। ফলে, ওঁরা বাংলা ছবি বা ধারাবাহিক, সিরিজ় দেখেন না। ফলে, ‘বায়াসড’ হওয়ার রাস্তা নেই।” তবে আত্মীয়দের মধ্যে চাপা অসূয়া কাজ করে বইকি। ঈর্ষায় সবুজ হয়ে অনেকে বলেন, “অনুমেঘার ওমুক ছবি দেখা হয়নি এখনও। কিংবা, আমরা তো ধারাবাহিক দেখি না!” ম্লান গলায় স্বীকারোক্তি ঋতুপর্ণার মায়ের। বদলে পাড়াপড়শি গর্ব করেন অনুমেঘাকে নিয়ে।

ঋতুপর্ণার সপাট দাবি, “গর্ব হয় অনুমেঘার মা বা বাবা হিসাবে যখন পরিচিত হই। গর্ব হয়, দেবশ্রী রায় যখন মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে বলেন, “আপনার মেয়ে খুব ভাল অভিনয় করছে।” কিংবা এত দিন পর্দায় দেখে অভিনেতাদের সঙ্গে একসারিতে বসতে পারি। মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাই।” জানিয়েছেন, মেয়ের উপার্জনের এক পয়সাও তাঁরা খরচ করেন না। সবটাই জমিয়ে রাখছেন। অনুমেঘা প্রাপ্তবয়স্ক হলে সব কিছু বুঝিয়ে দেবেন। বড় হয়ে যদি এই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে না পারে? “বেশির ভাগ শিশুশিল্পীই সেটা পারে না। তার জন্য অবসাদে ভোগে। আমরা তাই পড়াশোনা আর নাচের উপরে বেশি গুরুত্ব দিই। অনুমেঘা ভবিষ্যতে অভিনয় ছেড়ে দিলেও যাতে সমস্যায় না পড়ে”, যুক্তি ঋতুপর্ণার।
দেব, আবীর, ঋত্বিক, কোয়েল, সোহিনী- কে ভাল বাবা, কে ভাল মা? প্রশ্ন শুনে খিলখিলিয়ে হাসি। অনুমেঘা বলে উঠল, “ওরা তো আমার সিনেমার মা-বাবা! ওদের সঙ্গে তো আমি শুটিং করি। ওরা কেউ আমার সত্যিকারের মা-বাবা নয়। আসল মাম্মা-পাপা তো বাড়িতে থাকে।”
এবি/টিকে