ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে ছাড়িয়ে নিতে এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিয়েছেন যুবদলের এক নেতা। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওসির উদ্দেশে যুবদল নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’
ওই যুবদল নেতার নাম নাজমুল হুদা ওরফে মিঠু। তিনি পাশের পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি। পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার দুজনকে ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় ওসির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় ওই যুবদল নেতাকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের রাজোর গ্রামের সারোয়ার নুর (৩২) ও হামিদুর রহমান (৬০), ভাউলারবস্তি গ্রামের খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় শালফার্ম এলাকার জিয়াউর রহমানকে (৪২) আটক করে পুলিশ। বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং আটক সারোয়ার ও হামিদুরের বাড়ি একই এলাকায়। ওই দুজনকে আটক করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। পুলিশ রাজি না হলে বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। পরে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাহিদুলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী থানায় উপস্থিত হন। পরে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল হুদা থানায় এসে সারোয়ার ও হামিদুরকে আত্মীয় দাবি করে তাদের ছেড়ে দিতে ওসিকে অনুরোধ করেন। আটক ব্যক্তিরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেন। বেলা দেড়টার দিকে নাজমুল হুদার সঙ্গে জাহিদুল ইসলাম যুক্ত হয়ে তাদের ছেড়ে দিতে ওসিকে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ার একপর্যায়ে ওসির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার কয়েকজন। এ ঘটনার দুটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে দেখা যায়, যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে বলতে শোনা যায়, ‘মামলা করে ফেলেছেন, বলে দেন। কোনও কিছুই বলেন না। তিনটা থেকে ফোন দিচ্ছি, আমি মানুষ না?’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আমি তো বলেছি, হবে না।’ এরপর নাজমুল বলেন, ‘ফালতু কথা বলবেন না। হবে না এ কথা বলেন নাই। মিথ্যা কথা বলবেন না। আপনি মানুষ চিনেন নাই। আপনার এখানে রিজিক নাই, রিজিক উঠে গেছে।’ এ সময় ওসি তাদের চলে যেতে বললে আরও অনেকে কথা বলা শুরু করেন নাজমুল।
১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নাজমুল ওসিকে বলছেন, ‘পোশাকের ই দেখাইলেন, আর কি। আর চ্যালেঞ্জ করলেন আমাদের সঙ্গে।’ তখন এক পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘এত কথা বলিয়েন না ভাই।’ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুল বলেন, ‘কেন কথা বলবো না? শোনেন আওয়ামী লীগ আমলের থেকে এখন আরও বেশি ই হচ্ছে।’ তখন ওসি তাদের চলে যেতে বললে নাজমুল বলেন, ‘কেন যাবো? থানা আমরাও সেভ করছি, বুঝলেন? তিন-চার দিন থানায় বসে ছিলাম। না হলে থানা জ্বালায় দিতো।’
এ বিষয়ে রানীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হক বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আটক সবাই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি থানায় এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তখন পুলিশ সদস্যদের হাড়গোড় ভাঙাসহ থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমার ব্যবসার অংশীদার ও তার বাবাকে আটক করে পুলিশ। ওসিকে ফোন করলে থানায় যেতে বলেন। রানীশংকৈল থানায় গিয়ে পুলিশকে জানাই, তারা কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত না। কিন্তু ওসি কোনও উত্তর না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। ওসির ওই আচরণের কারণে প্রতিবাদ করেছি। পুলিশকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি শুধু বলেছি, ৫ আগস্ট আমরা থানা পাহারা না দিলে উত্তেজিত জনগণ থানা পুড়িয়ে দিতো।’
এদিকে ওসিকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় যুবদল নেতা নাজমুল হুদাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল। বৃহস্পতিবার যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলামের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইউটি/টিএ