সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট এম এ আজিজ বলেছেন, ড. ইউনূসকে বিশ্বাসের চরম মূল্য দিতে হবে বিএনপিকে। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত চতুর কিন্তু বিএনপি তা বুঝতে পারেনি। আমিও প্রথম দিকে ভুল করেছি; তাকে বিশ্বাস করে তার পক্ষে কথা বলেছি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি যদি প্রধান উপদেষ্টাকে স্পষ্টভাবে বলত-দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তাহলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকত, দেশ অচল অবস্থায় যেত না। কিন্তু তারা সেটা বলেনি বলেই আজকের এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি এক টক শো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এম এ আজিজ এসব কথা বলেন।
এম এ আজিজ বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার পলায়ন না করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির দৃশ্যমান হতো না।
তারা ছাত্রলীগের ‘লুঙ্গির তলায়’-গুপ্ত অবস্থাতেই থাকত। তাই সরকারের উচিত ছিল গুপ্ত রাজনীতি শুধু বামপন্থীদের মতো আন্ডারগ্রাউন্ড দলগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুপ্ত রাজনীতির কোনো বৈধতা নেই; এটি নিষিদ্ধ হওয়াই উচিত।
তিনি বলেন, গুপ্ত রাজনীতি থাকবে কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিল, তারা নির্বাচনে দাঁড়াল কীভাবে? গণতান্ত্রিক যুগে আন্ডারগ্রাউন্ড বা গুপ্ত রাজনৈতিক সংগঠন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
এম এ আজিজ বলেন, এখন ভূরাজনীতির ফাঁদে বাংলাদেশ। আমেরিকা যে ট্যাক্স বসিয়েছে-সেটা শুধু দৃশ্যমান অংশ। এর পেছনে যে গোপন চুক্তিগুলো হয়েছে, সেগুলোর ভেতরে কী আছে, আমরা কেউই জানি না। তাহলে কীভাবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়-বাংলাদেশে কোনো সামরিক ঘাঁটি হবে না? ইতিমধ্যে পোর্ট দেওয়া হয়েছে, মানবিক করিডরের অনুমতি দেবে না—এই নিশ্চয়তা কী? মালামাল আসা–যাওয়ার নামেই অনেক কিছু ঢুকে পড়ে।
এইভাবেই ভূ-রাজনীতির বড় শক্তিগুলো ছোট দেশগুলোকে ধীরে ধীরে ফাঁদে ফেলে। তিনি বলেন, আজ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে-নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইএমএফ পর্যন্ত নতুন ঋণ ছাড়ছে না। অর্থনীতি তিন-চার ডিজিটের গভীর সংকটে নেমে গেছে। জিডিপি গ্রোথ ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় দেশে দুর্ভিক্ষ হলে-বর্তমান কাঠামোতে কেউই তা সামলাতে পারবে না। বিএনপি নির্বাচনে জিতলেও এত বড় সংকট মোকাবেলা করা তাদের জন্যও সহজ হবে না। কারণ দেশকে এমন এক ভয়াবহ জায়গায় বর্তমান সরকার ঠেলে দিয়েছে, যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরো বলেন, এখন যে সরকার চলছে, সেখানে সরকারসহ উপদেষ্টা পরিষদে মোট ১৭ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। অর্থাৎ আমরা এখন কার্যত বিদেশি নাগরিকদের শাসন ব্যবস্থার অধীনেই অবস্থান করছি।
এম এ আজিজ বলেন, আমার মনে হচ্ছে, ইউনূস সাহেব মূলত পরাশক্তির একটি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় তিনি এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করছেন-যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত কোনো শক্তিশালী পক্ষের হাতে চলে যাবে। আর সেই পক্ষটি পরাশক্তির স্বার্থই বাস্তবায়ন করবে। এর অর্থ দাঁড়ায়—জাতির সামনে গুরুতর এক দুর্যোগ আসন্ন।
এবি/টিকে