আইন উপদেষ্টা ড. আফিস নজরুল বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। আজ আমরা মাজদার হোসেনের মামলার যে রায় ছিল সেটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার শেষ ধাপ সম্পন্ন করলাম।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকালে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ হোক, এই আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের মনে গত ২০-৩০ বছর যাবৎ রয়েছে। এটা নিয়ে আলোচিত হচ্ছে, অনেক পলিটিক্যাল পার্টি অনেক আশ্বাস দিয়েছে, অনেক কিছু বলেছেন। আলটিমেটলি আমরা এখন একটা ভালো জায়গায় আসতে পেরেছি। সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এটা আমাদের বিচারীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ছিল। সেখানে এই প্রস্তাবে ঐকমত্য কমিশনের অংশগ্রহণকারী, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সব দল সম্মত হয়েছে। সব দল এটায় একমত যে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটা পৃথক সচিবালয় রাখবে, পৃথক সচিবালয়ের একটা আইনের নীতিগত অনুমোদন জন্য এর আগে আমরা এটা উপদেষ্টা মিটিং করেছিলাম।
তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের যে কন্ট্রোল বা শৃঙ্খলা কন্ট্রোল এবং শৃঙ্খলা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এটা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত। রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত মানে হলো, প্রধানমন্ত্রী পরামর্শক্রমে করেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয় কাজটা করে। প্রায়োগিকভাবে নিম্ন আদালতে বিচারকদের যে শৃঙ্খলা এবং কন্ট্রোল যে বিধানগুলা সেটা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় করে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারক যে কন্ট্রোল– কন্ট্রোল বলতে বুঝায় নিম্ন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়াদি, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়াদি, এমনকি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ কর্মের শর্তাবলি নির্ধারণ, সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে। আইন মন্ত্রণালয় যেটা করতো এটা সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিচারকাজে নিয়োজিত যারা আছেন, সেই বিচারকদের কন্ট্রোল, শৃঙ্খলা এবং ছুটির বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের হাতে চলে যাবে। কিন্তু অন্য যারা আছেন, বিচার বিভাগে যারা কাজ করেন, বিচারক, তারা অন্য কোনও জায়গাতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে, আমাদের নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জুডিসিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশন এ ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা, নিম্ন আদালতের বিচারকরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন, যে প্রশাসনিক দায়িত্ব নিম্ন আদালতের বিচারকরা পালন করবেন, তাদের কাজের শৃঙ্খলা, ছুটির বিষয়াদি, কন্ট্রোল– এটা কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাতেই থাকবে। শুধু নিম্ন আদালতের বিচারক যারা আছেন তাদের কন্ট্রোল, নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান, শৃঙ্খলা ত্রুটিজনিত বিষয়টি, উচ্চ আদালতের হাতে চলে যাবে। উচ্চ আদালত তার সচিবালয়ের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে নিম্ন আদালতে যারা বিচারক থাকতেন, তাদের আইন মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল করতো বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছায় নিম্ন আদালতের বিচারকরা জামিন দেবেন কি দেবেন না, সাজা দেবেন কি দেবেন না, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেন। এমন অনেক অভিযোগ আমরা শুনতাম। এমন অনেক কিছু আমরা দেখতাম। এই অবস্থার অবসান ঘটবে। এই অধ্যাদেশ পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের ওপর আইন মন্ত্রণালয় তথা সরকারের আর কোনও কন্ট্রোল থাকবে না। সম্পূর্ণভাবে এটা উচ্চ আদালত তার সচিবালয়ের মাধ্যমে বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে।
ইউটি/টিএ