নরসিংদীতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় আহত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ছাড়া ভূমিকম্পের সময় ভয়ে স্ট্রোক করে নিজ বাড়িতে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলা মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ভূমিকম্পে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৭০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভূমিকম্পে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
পাশাপাশি একই এলাকায় একটি ডেইরি ফার্মের (গরুর) মাঠে মাটি ফেটে আলাদা হয়ে গেছে। পাশাপাশি এই শক্তিশালী ভূমিকম্পে বসতবাড়ি, মার্কেট ও বহুতল বেশ কয়েকটি ভবনে ফেটে হেলে পড়েছে।
ভূমিকম্পে নিহতরা হলেন সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি এলাকার দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের ছেলে হাফেজ মো. ওমর (৮)। নিহত ওমর ফারুকের বাবা দেলোয়ার হোসেনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন।
তারা নির্মাণাধীন ভবনের মালামালের নিচে পড়ে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছে।
এ ছাড়া পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়েন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান।
পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের কাজীরচর নয়াপাড়া এলাকার মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পের সময় নিজ বাড়িতে ভয় পেয়ে স্ট্রোক করেন। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এই ভূমিকম্পে নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পন অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এতে নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন
ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। যার কারণে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল শহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটের চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
বিভিন্ন ভবনে ফাটল
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাজারের ছয়তলা বিল্ডিং এসএ প্লাজায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিল্ডিংয়ে মারকাযুস্ সুন্নাহন তাহ্ফীজুল কোরআন মাদরাসা রয়েছে। মাদরাসার পরিচালক মুফতি সালাহ উদ্দীন আনসারী ফাটলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া ঘোড়াশালের লেবুপাড়া এলাকায় ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্মের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এ ছাড়া পলাশ রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পাশে একটি বিল্ডিং এ ফাটল দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। ঘোড়াশাল নতুন বাজার গ্রামের ইসহাক মিয়ার বাড়ি ভেঙে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত পাইকারি কাপরের হাট নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট বাজারের ধুমকেতু মাঠে একটি চারতলা ভবন (মাধবদীর সাবেক মেয়র ইলিয়াস হোসেনের মালিকানাধীন) হেলে পার্শ্ববর্তী বিল্ডিং এ পড়েছে। এতে কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শহরের গাবতলী এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আরাফাত শাহ দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ভূমিকম্পে আমার চারতলা বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন দেয়ালের টাইলস ভেঙে পড়েছে। এতে বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙে গেছে। তবে বাসার সবাই সুস্থ আছি কিন্তু আতঙ্কে রয়েছি। বিশেষ করে বাচ্চারা অনেক ভয় পেয়েছে।
হাসপাতালের চিত্র
ভূমিকম্পে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন ভবন, বসতবাড়ি, মার্কেট ও দোকানপাট থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ভূমিকম্পের সময় অনেকে মাথা ঘোরপাক খেয়ে পড়ে গিয়ে, বুকে ব্যাথা নিয়ে ও স্ট্রোক করে আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহতদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন এবং ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন সৈয়দ আমীরুল হক শামীম।
ইএ/টিকে