অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহামম্মাদ ইউনূস আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২১শে নভেম্বর) ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বক্তব্য প্রদানকালে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই একটি নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করব, যা আমাদের সকলের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এই নির্বাচন যেন সর্বাঙ্গসুন্দর, আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর হয়, এবং আমরা যেন আমাদের কাঙ্ক্ষিত যাত্রাপথে সুন্দরভাবে রওনা হতে পারি, সেজন্য আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ও অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ড এবং জাতীয় যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার কার্যক্রমে সশস্ত্র বাহিনী বরাবরের মতোই জনগণের আস্থার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছে। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তাদের পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার ও তৎপরতার এই ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অক্ষুন্ন রাখবে।
দেশের প্রতিরক্ষা নীতি প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমরা সকল বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মানজনক সহাবস্থানে বিশ্বাসী। তবে যেকোনো বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের সদা প্রস্তুত এবং সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে।' এ লক্ষ্য অর্জনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আধুনিকায়ন, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাহিনীগুলোতে যুগোপযোগী প্রযুক্তি সংযোজনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে ড. ইউনূস জানান, গত ৩৭ বছরে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশন সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ১০টি মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। এই অর্জনের জন্য তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
একইসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যেন বিশ্বের চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অঞ্চলগুলোতে উদ্ভূত পরিস্থিতি সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে, সেজন্য তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় আধুনিক সরঞ্জাম সরবরাহের প্রচেষ্টা সরকার অব্যাহত রাখবে।
ইএ/টিকে