বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সামগ্রিক উন্নয়নকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচআহসান এইচ. মনসুর মনসুর। তিনি বলেন, এই হতাশার মূল কারণ হচ্ছে সুশাসনের ব্যর্থতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সীমাবদ্ধতা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাব।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে হোটেল রেডিসনে মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, “আইনকানুন কঠোর হলেও অনেক অনিয়ম ভেতরে-ভেতরে ঘটে যায়, যা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা অনেকটা ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র মতো অবস্থা। আমাদের আর্থিক খাতের আকার খুবই ছোট। ফলে আর্থিক খাত থেকে অর্থনীতিতে যে সুবিধা আসার কথা, তা আমরা পাচ্ছি না। দুর্নীতি, সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা এ ক্ষেত্রে বড় বাধা।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের আর্থিক খাত বহু দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে। তবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, এ নিয়ে কোনো দ্বিধা বা দোদুল্যমানতা থাকা উচিত নয়। কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন, টিআইএন নম্বরসহ বিভিন্ন জটিলতা আমরা দূর করেছি। গত সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের টিকিট ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনার যে সমস্যা ছিল, তা সমাধান করেছি। এভাবে আমরা ডিজিটাল লেনদেনের নানা বাধা দূর করছি।”
অনুষ্ঠানে মাস্টারকার্ড সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট গৌতম আগারওয়াল বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় সামনে আরও অনেক সম্ভাবনাময় সময় অপেক্ষা করছে। ব্যাংক, ফিনটেক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ সমগ্র ইকোসিস্টেমে অংশীদারিত্ব ও উদ্ভাবনের সমন্বয়ে ডিজিটাল পেমেন্টকে আরও সহজ, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলাই এ অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। মাস্টারকার্ড গ্লোবাল অভিজ্ঞতা ও স্থানীয় চাহিদার সমন্বয়ে এসব অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে গর্ববোধ করে। মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ তাদেরই সম্মান জানায়, যারা এই ভবিষ্যৎকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান করা হয় ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে। এ বছর ১৯টি ক্যাটাগরিতে মোট ১৮টি প্রতিষ্ঠান ৩৩টি পুরস্কার পেয়েছে।
অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এসএসএল কমার্জ, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সাউথ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, পাঠাও পে, এসিআই লজিস্টিকস ও বিকাশ লিমিটেড।
যেসব ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে: ডিজিটাল ইনোভেশন, ডিজিটাল বিজনেস, অনলাইন বিজনেস, ডেবিট (ডোমেস্টিক ও ক্রস-বর্ডার), ক্রেডিট (ডোমেস্টিক ও ক্রস-বর্ডার), প্রিপেইড (ডোমেস্টিক ও ক্রস-বর্ডার), পিওএস ও অনলাইন অ্যাকোয়ারিং, অ্যাগ্রেগেন্ট, লোকেশন-বেসড অ্যাকোয়ারিং, কো-ব্র্যান্ডস, ইনোভেশন অ্যান্ড ইনোভেশন ইন অ্যাকসেপ্ট্যান্স, ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন, ইমার্জিং বিজনেস এবং মাস্টারকার্ড বিজনেস গ্রোথ (ইস্যুয়িং)।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী, মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ডিরেক্টর জাকিয়া সুলতানা ও সোহেল আলিমসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ফিনটেক কোম্পানি, কূটনীতিক এবং বিভিন্ন বৃহৎ মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
এবি/টিকে