চট্টগ্রামে জামায়াতের দায়িত্বশীলদের সম্মেলনে দলটির সাবেক এমপি ও নগর জামায়াতের সাবেক আমীর শাহাজাহান চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্য ঘিরে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার বক্তব্যে প্রশাসনকে ‘নিজেদের অধীনে আনার’ কথা উল্লেখ করায় বিএনপি দাবি করেছে, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। তবে জামায়াত বলছে, ওই বক্তব্য পুরোপুরি তার ব্যক্তিগত, দলের অবস্থান নয়।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, শাহাজাহান চৌধুরীর কথায় পরিষ্কার বোঝা যায়, তারা আরেকটি ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে চায়। এ ধরনের বক্তব্য আসন্ন নির্বাচনের অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে। তাই তার গ্রেপ্তার দাবি করছি।
অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রশাসনকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে দিতে হবে। এখানে কোনো দলীয় হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। সম্মেলনে শাহাজাহান চৌধুরী যে কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত মন্তব্য। শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান অঞ্চলের নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
সম্মেলনে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাতকানিয়া আসনে জামায়াত প্রার্থী শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে জয় পেতে হলে প্রশাসনকে তাদের ‘আন্ডারে’ আনতে হবে এবং পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমর্থন পেতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে হয় না, প্রশাসনকেও ‘কথায় উঠতে বসতে হবে’। প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওসি যেন আগে থেকেই সব প্রোগ্রাম জেনে প্রটোকল দেন।
তিনি আরও দাবি করেন, এবার জামায়াতকে ক্ষমতায় নেওয়ার ‘সিদ্ধান্ত আল্লাহ নিয়ে ফেলেছেন’। সম্ভাব্য নির্বাচনের তারিখ হিসেবে তিনি ৫ ফেব্রুয়ারি উল্লেখ করেন। ভোট পেতে জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের জন্য কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি। তার ভাষায়, চোখে ‘মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর চেহারা ভাসিয়ে’ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট চাইতে হবে।
সম্মেলনে তিনি বলেন, এবার যে সুযোগ এসেছে, তা আর আসবে না। জনগণের মনোভাব বুঝে মাঠে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের মতে যোগ্য নেতা আছেন অনেকেই, তবে তার দৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
পরে দলের প্রার্থীদের সহায়তায় মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্বাচনে অপকর্ম রুখে দেওয়া, অর্থ দিয়ে ভোট কেনা প্রতিরোধসহ নানা নির্দেশনা দেন বক্তারা। এর আগে বিকেলে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ডে নামেন ডা. শফিকুর রহমান। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ‘নির্বাচনের জেনোসাইড’ হবে।
সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন নেতারা বক্তব্য দেন।
ইউটি/টিএ