জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নিজ সরকারের ব্যাপক প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস থেকে গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেওয়া এক সন্ধ্যাকালীন ভাষণে তার সরকারের ১১ মাসের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন। যা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে। ভাষণে তিনি ভোক্তাপণ্যের উচ্চমূল্যের জন্য তার ডেমোক্র্যাট পূর্বসূরির ওপর দায় চাপান এবং বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ সংস্কারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

নিজ দল রিপাবলিকান পার্টি আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ার প্রস্তুতির মধ্যে এ ভাষণ দিলেন তিনি।

কূটনৈতিক অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে বক্তব্য রেখে ট্রাম্প বলেন, তার প্রশাসন ‘বহু সাফল্য’ অর্জন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে গাজায় যুদ্ধের অবসান, ইরানের পারমাণবিক হুমকি নির্মূল করা এবং ৩ হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’।

তিনি আরো জানান, তার প্রশাসন ১০ মাসের মধ্যে আটটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে এবং গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের জীবিত এবং মৃত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ট্রাম্প আরো বলেন, তার বর্তমান মেয়াদ মার্কিন সামরিক শক্তি পুনরুদ্ধার করেছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে।’ ২০ মিনিটের কম সময় ধরে তিনি ভাষণ দেন। 

অভ্যন্তরীণ সংস্কার

দেশের ভেতরের নীতির দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি খুব শিগগিরই ফেডারেল রিজার্ভের পরবর্তী চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করবেন। তিনি জানান, যাকে এই পদে বেছে নেওয়া হবে, তিনি সুদের হার বড় আকারে কমানোর পক্ষে থাকবেন।

তিনি আগামী বছরের মধ্যে আবাসন সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের তৈরি করা মুদ্রাস্ফীতির বিপর্যয়ের কারণেই লাখ লাখ আমেরিকান নিজেদের বাড়ির মালিক হতে পারছেন না।

ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারের রেকর্ড বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, যা উচ্চ মজুরি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। তিনি আরো যোগ করেছেন, দশ লাখের বেশি মার্কিন পরিষেবা সদস্য ক্রিসমাসের ছুটির আগে আর্থিক বোনাস পাবেন।

অভিবাসন প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত খোলা ছিল, যার ফলে তার ভাষায় ‘লাখ লাখ’ মানুষের ঢল নেমেছিল। ট্রাম্প এ বছর তার প্রশাসনের কাজের প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমানো থেকে শুরু করে কিছু পণ্যের দাম কমানোর মতো নানা ক্ষেত্রে তার সরকার কাজ করেছে।

এ ছাড়া তিনি বলেছেন, বড় বড় স্বাস্থ্য বীমা কম্পানির বিরুদ্ধে তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। তার অভিযোগ, এসব কম্পানি এমন বিপুল সম্পদ জমা করেছে, যা আসলে সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। আরেকটি দাবিতে ট্রাম্প সোমালিদের মিনেসোটা রাজ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরি করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তার প্রশাসন এটি বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেবে।

ভাষণে ট্রাম্প বলেন, তিনি ১৮ ট্রিলিয়ন (১৮ লাখ কোটি) ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছেন, যা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কারখানা চালু করবে। এর পেছনে তাঁর শুল্কনীতির বড় ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

ভাষণে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, আগামী সপ্তাহে তার প্রশাসন ১৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন সেনাসদস্যকে ১ হাজার ৭৭৬ ডলার করে ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেবে। পাশাপাশি তিনি রিপাবলিকানদের একটি প্রস্তাবে সমর্থন জানান। প্রস্তাবে ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়ার বদলে সরাসরি জনগণকে নগদ অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে; যাতে তাঁরা নিজেরাই স্বাস্থ্যবিমার খরচ মেটাতে পারেন। তবে কংগ্রেসে এ প্রস্তাব এখনো পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি।

এই ভাষণটি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে তৈরি হওয়া উদ্বেগের জবাব দেওয়ার একটি বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেও এসব উদ্বেগকে বারবার ডেমোক্র্যাটদের ‘ভাঁওতাবাজি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বুধবারের বক্তব্যেও তিনি জো বাইডেন-এর শাসনামলের দিকে দায় চাপান, যদিও স্বীকার করেন যে পণ্যের দাম এখনো বেশি। তবে তার দাবি, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন পুরোপুরি ‘প্রস্তুত’।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এই বাড়তি দাম কমাচ্ছি এবং খুব দ্রুতই দাম নিচে নামবে।’

আগামী বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায়। অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে জনমনে থাকা উদ্বেগ এবং স্বাস্থ্যনীতি ঘিরে মতবিরোধকে সামনে এনে আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে।

অনেক আমেরিকান যখন অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানাচ্ছেন, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং পারিবারিক আর্থিক বিষয় নিয়ে উদ্বেগ এখনও প্রকট। তখন ট্রাম্পের এই বক্তব্য এসেছে।

সূত্র : টিআরটি, রয়টার্স

আরপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আমার ভাই হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে ফেরত নিয়ে গেছেন: মাহমুদা মিতু Dec 18, 2025
img
হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শায়খ আহমাদুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট Dec 18, 2025
img
আবরার ফাহাদ-আবু সাঈদের কাতারে যুক্ত হলেন ওসমান হাদি: মিজানুর রহমান আজহারি Dec 18, 2025
img
ওসমান হাদিকে ‘আপসহীন জুলাই যোদ্ধা’ উল্লেখ করে জামায়াত আমিরের শোক প্রকাশ Dec 18, 2025
img
শহীদ আলহামদুলিল্লাহ: হাসনাত Dec 18, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধের শোক প্রকাশ Dec 18, 2025
img
হাদির মৃত্যুতে শাহবাগে অবস্থান নিলেন জুলাই মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরা Dec 18, 2025
img
শুক্রবার দেশে আনা হবে ওসমান হাদির মরদেহ Dec 18, 2025
img
কিছুক্ষণের মধ‍্যে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা Dec 18, 2025
img
ভোটের রায়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজিত করতে হবে: নিপুণ রায় Dec 18, 2025
img
হাদির মৃত্যুতে জামায়াতের শোক Dec 18, 2025
img
বিদায় বন্ধু শহীদ হাদি: পিনাকীর ফেসবুক পোস্ট Dec 18, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে এনসিপির শোক প্রকাশ Dec 18, 2025
img
হাদি না থেকেও বেশি করে থাকবেন বাংলাদেশের বুকে: ফারুকী Dec 18, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে বিএনপির শোক প্রকাশ Dec 18, 2025
img
প্রথম ‘মিস ইন্ডিয়া’ বিজয়ী আর নেই Dec 18, 2025
img
ওসমান হাদি আর নেই Dec 18, 2025
img
ভারতের অখণ্ডতা ও ওসমান হাদি ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতি Dec 18, 2025
img
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাতেই পদত্যাগ না করলে যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার হুঁশিয়ারি জাতীয় ছাত্রশক্তির Dec 18, 2025
img
মেসির স্বপ্ন পূরণের মাঠেই ফাইনালিসিমা Dec 18, 2025