সংগীতবলয়ে হৃদয় খানের বেড়ে ওঠা। সে কারণে শিল্পী ও সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশে অবাক হননি কেউ। চমকে গিয়েছিলেন ঠিকই। কেননা, কৈশোরের খোলস থেকে বের হয়ে আসতে না আসতেই হৃদয় তাঁর সৃষ্টিতে তুলে এনেছিলেন নতুন শব্দ-সংযোজনা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনব সব আয়োজন করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সুদূরের যাত্রী; পথচলা যার সবেমাত্র শুরু।
একুশ শতকের প্রথম ভাগে সংগীতাঙ্গনে হাতেগোনা যে ক’জন নতুন দিনের হাওয়া বইয়ে দিয়েছিলেন, হৃদয় ছিলেন সেই সংগীতায়োজকদের মধ্যমণি। যদিও এসব কথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি তাঁর গাওয়া কিংবা সুর-সংগীতায়োজনের জনপ্রিয় গানগুলোর তালিকাও তুলে ধরার দরকার হয় না, কারণ এ সম্পর্কে কম-বেশি সবারই জানা। যে বিষয়টি কিছু মানুষের অজানাই রয়ে গেছে, তা নিয়ে তো কথা না বললেই নয়। সেটি হলো নির্মাতা হৃদয়ে খানের গল্প।
কী সেই গল্প? এ প্রশ্ন উঠে আসার আগে বলে নিই–হৃদয় খান শুধু যে প্রথম সারির গায়ক ও সংগীত পরিচালক, তা নন। তাঁর ভেতর একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাও বাস করেন; যার অভিষেক হওয়ার কথা ছিল আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে। কেউ কেউ হয়তো শুনেছিলেন, নন্দিত এই শিল্পী ‘ট্র্যাপড’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানাচ্ছেন। ব্যাস, এটুকুই জানা ছিল। কী সেই সিনেমার বিষয়বস্তু, কারা অভিনয় করছেন, কবে কীভাবে এটি মুক্তি পাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না অনেকের।
অন্তর্মুখী স্বভাবের হৃদয় এ নিয়ে বেশি কিছু বলেননি। আড়ালে চুপচাপ নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছিলেন। তাঁর গান প্রকাশ পাচ্ছিল, শ্রোতা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন। দেখছিলেন, হৃদয় ব্যস্ত তাঁর একক, দ্বৈত গানের পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পীর গানের সংগীতায়োজন নিয়ে। প্লেব্যাকের পাশাপাশি সিনেমায় সংগীত পরিচালনাও করতে দেখা গেছে তাঁকে। এরপর রিয়েলিটি শো ‘অনন্য প্রতিভা’-তে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এভাবেই মাঝে কেটে গেছে পাঁচটি বছর; যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা ঢাকা পড়ে গেছে সিনেমা নির্মাণের খবর।
ছয় বছরের মাথায়, আবার ভেসে এলো ‘ট্র্যাপড’ সিনেমার খবর। না, এবার আর ধোঁশায়া নয়, হৃদয় স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিলেন, কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পাচ্ছে তার এই সিনেমা। কয়েক বছরের আক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এখনও দর্শকের সামনে তুলে ধরা বাকি। তিনি এও জানিয়েছেন, স্বল্পদৈর্ঘ্য হলেও বাণিজ্যিক ধারার পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার আমেজ খুঁজে পাওয়া যাবে ‘ট্র্যাপড’-এ। কারণ গল্পই এই সিনেমার প্রাণ; যেখানে দেখা যাবে, কীভাবে হৃদয় নামের এক তরুণ নিজের অজান্তেই মাদক চক্রের ফাঁদে পড়ে যান।
এরপর নিরাশার দোলাচলে হৃদয় যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই তাঁর জীবনে আসেন মোনা নামের এক তরুণী; যে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান হৃদয়কে। কিন্তু হৃদয়ের স্বপ্নবুনন শুরু হতে না হতেই আকস্মিকভাবে খুন হন মোনা। এরপর আবারও এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে হৃদয়ের জীবন। এবার সমস্ত হতাশা ছুড়ে ফেলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিশোধপরায়ণ। এরপর গল্প মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। এমনই এক গল্প পর্দায় তুলে ধরার মধ্য দিয়ে রচিত হতে যাচ্ছে হৃদয় খানের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়; যেখানে একই সঙ্গে তিনি চিত্রনাট্যকার, নির্মাতা, অভিনেতা ও সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্বাসঘাতকতা, ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘ট্র্যাপড’-এ তাঁর সহশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী মোনালিসা ও প্রবাসী কয়েকজন শিল্পী।
হৃদয়ের কথায়, ‘ফটোগ্রাফির নেশা থেকে নির্মাণে চলে আসা। যদিও এটি কঠিন কাজ, তবু চ্যালেঞ্জ নিতে দ্বিধা করিনি। আসলে শিল্পী মনে যে ক্ষুধা, তা কেবল সংগীত সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে পূরণ হচ্ছিল না। মন চাইছিল আরও কিছু করতে। সে কারণে ধীরে ধীরে নির্মাণের দিকে ঝুকে পড়া। মনের ভেতর লালন করা গল্পটা চিত্রায়ণের মধ্য দিয়ে দর্শকের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে চেয়েছি। চাওয়া এটুকই। তাই নির্মাতা হিসেবে সাফল্য বা ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ কষতে চাইনি।’
এসএন