ইউক্রেনের তাৎক্ষণিক আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা আগামী দুই বছরের জন্য ৯০ বিলিয়ন ইউরো ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের বিপরীতে এই ঋণ নিশ্চিত করার প্রস্তাবটি নিয়ে তারা একমত হতে পারেননি। দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবার ভোরে দীর্ঘ আলোচনার পর ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তা পূরণ করেছি।
তিনি জানান, ইইউর বাজেটের গ্যারান্টিতে ইউক্রেনকে এই ঋণ দেওয়া হবে এবং রাশিয়া যুদ্ধক্ষতিপূরণ দিলে তবেই কিয়েভকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনে এই ঋণ পরিশোধে জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহারের অধিকার ইইউ নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, এই চুক্তি ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা, যা দেশের স্থিতিশীলতা আরো শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, রুশ সম্পদ জব্দ অবস্থায় থাকা এবং ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি।
সম্মেলনের আগে বেশ কয়েকজন ইইউ নেতা ইউরোপে জব্দ থাকা রাশিয়ার প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো সম্পদের একটি অংশ বন্ধক রেখে এই ঋণ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তবে বেলজিয়ামের আপত্তির কারণে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ইইউতে জব্দ রুশ সম্পদের প্রায় ৮৮ শতাংশই বেলজিয়ামে সংরক্ষিত। দেশটির আশঙ্কা, ভবিষ্যতে মস্কো যদি ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত কোনো মামলায় জয়ী হয়, তাহলে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রকে সীমাহীন বাজেট গ্যারান্টির দায় নিতে হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডে ওয়েভার বলেন, যুদ্ধক্ষতিপূরণনির্ভর ঋণ পরিকল্পনাটি আদৌ ভালো ধারণা ছিল না।
এদিকে ব্রাসেলসভিত্তিক ক্লিয়ারিং সংস্থা ইউরোক্লিয়ার বর্তমানে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়ের করা ২৩০ বিলিয়ন ডলারের মামলার মুখোমুখি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা রুশ গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের শিকার হচ্ছেন বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত একটি শক্ত বার্তা দেয়।
তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তখনই নমনীয় হবেন, যখন তিনি বুঝতে পারবেন যে, এই যুদ্ধ থেকে রাশিয়ার কোনো লাভ নেই। মের্ৎস আরো জানান, রাশিয়া যদি ক্ষতিপূরণ না দেয়, তবে আন্তর্জাতিক আইনের পূর্ণ সম্মান বজায় রেখেই জব্দ করা রুশ সম্পদ ব্যবহার করে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল, ইইউর বাজেট থেকে ইউক্রেনকে অর্থায়নের জন্য সর্বসম্মতির প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি জটিল হয়ে উঠতে পারে। তবে মধ্য ইউরোপের তিনটি জাতীয়তাবাদী সরকার-হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র- ঋণের গ্যারান্টিতে অংশ না নেওয়ার শর্তে বাজেট ব্যবহারে সম্মতি দেয়।
টিজে/টিকে