ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে তার নিজ জেলা ঝালকাঠির সর্বস্তরের মানুষ। হত্যার বিচার ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে প্রতিবাদের পর শুক্রবার জুমার নামাজের শেষে আবারও রাজপথে নামেন ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এ সময় ঝালকাঠিতে মিছিল শেষে মহাসড়ক অবরোধ করে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই যোদ্ধা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ঝালকাঠি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ মোড়ে এসে অবস্থান নেয়। পরে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়কের কলেজ মোড় এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন তারা।
অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচিতে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনাগামী দূরপাল্লার বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক যানবাহন আটকে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় স্থানীয় প্রশাসনকে।
একই দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ঝালকাঠি জেলা শাখার উদ্যোগেও বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। জুমার নামাজের পর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ এলাকা থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় তারা শরীফ ওসমান বিন হাদী হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ ছাড়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঝালকাঠি জেলা শাখার উদ্যোগেও পৃথক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শরীফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ড কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। একটি উদীয়মান ও প্রতিবাদী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। একইসঙ্গে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই যোদ্ধা রাইয়ান বিন কামাল বলেন, এই রাষ্ট্র যদি শরীফ ওসমান বিন হাদির হত্যার বিচার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মানুষ নিজেরাই বিচার আদায় করতে বাধ্য হবে। হাদিকে হত্যা করে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন থামানো যাবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা যুগ্ম সমন্বয়ক জুবায়ের হাওলাদার বলেন, গতকাল রাতেই আমরা রাজপথে নেমেছি, আজ জুমার নামাজের পর আবার নেমেছি। হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।
গণঅধিকার পরিষদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী মো. মাহমুদুল ইসলাম সাগর বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার না করা হলে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঝালকাঠি জেলা সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, শরীফ ওসমান বিন হাদিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা প্রমাণ করে—এই রাষ্ট্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা চরম সংকটে রয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। যদি এই হত্যার বিচার নিয়ে টালবাহানা করা হয়, তাহলে জনগণ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আস্থা হারাবে।
জামায়াতে ইসলামীর ঝালকাঠি জেলা আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান বলেন, শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংস ও পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যা। একজন প্রতিবাদী ও সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করতেই তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এবি/টিকে