শুক্রবার উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি গ্রামের কাছে সামরিক চৌকিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলাকারী এবং তিনজন বন্দুকধারী হামলা চালিয়েছে। এতে সেখানে এক ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এ ঘটনায় চার সেনা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং স্থানীয় পুলিশের মতে, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে এই হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণে আশপাশের ঘরবাড়ি ধসে পড়ে এবং বেসামরিক নাগরিকরা আহত হন।
সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লড়াইয়ের সময় সেনারা সব আক্রমণকারীকে হত্যা করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে সেনাবাহিনী হামলার জন্য পাকিস্তানি তালেবানকে দায়ী করেছে। এতে বলা হয়েছে, আক্রমণকারীরা প্রথমে চৌকির পরিধি ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তাদের প্রতিহত করা হয়েছিল। সন্ত্রাসীরা পরে বাইরের দেয়ালে বিস্ফোরকভর্তি একটি গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়।
বোমা হামলার ফলে আশপাশের ঘরবাড়ি এবং একটি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলাটি আফগানিস্তানের সীমান্তের ওপার থেকে পরিকল্পিত এবং পরিচালিত হয়েছিল। কাবুলের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। আফগানিস্তান জোর দিয়ে বলে আসছে, তারা কাউকে পাকিস্তানসহ কোনো দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার জন্য আফগান মাটি ব্যবহার করার অনুমতি দেয় না।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তান আশা করে আফগানিস্তানের তালেবান শাসকরা সন্ত্রাসীদের আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখবেন। তারা আরো জানিয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী এবং তাদের সহায়তাকারীদের তাড়া করার অধিকার সংরক্ষণ করে।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইসলামাবাদে আফগান তালেবানের ডেপুটি হেড অব মিশনকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে তলব করেছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘পাকিস্তান আফগান মাটি থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার অপরাধী এবং সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে পূর্ণ তদন্ত ও সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।’
তারা বলেছে, ‘আফগান তালেবান সরকারকে তাদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত সমস্ত সন্ত্রাসীগোষ্ঠী, তাদের নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট এবং যাচাইযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের জন্য আফগান মাটির ক্রমাগত ব্যবহার অস্বীকার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘আফগান তালেবান সরকারকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং তার নাগরিকদের সুরক্ষার অধিকার সংরক্ষণ করবে। আফগান মাটি থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
পাকিস্তান প্রায়ই আফগানিস্তানের তালেবান শাসকদের বিরুদ্ধে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে। কাবুল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা তার ভূখণ্ড অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয় না। আফগানিস্তানের তালেবান পৃথক হলেও টিটিপি-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
অক্টোবর থেকে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৯ অক্টোবর কাবুলে বিস্ফোরণের পর সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। যার জন্য আফগানিস্তান পাকিস্তানকে দায়ী করে। যদিও কাতার পরে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিল। নভেম্বরে তুরস্ক আয়োজিত পরবর্তী আলোচনায় উভয় পক্ষ কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছিল।
ইউটি/টিএ