আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন’ হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনে আজ রবিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশের দিন দুই দিন পিছিয়ে দিয়েছেন। আগামী ২৩ ডিসেম্বর আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এই মামলার মোট আসামি ১৭ জন। এই ১৭ আসামির মধ্যে বর্তমানে কর্মরত ১০ জন সেনা কর্মকর্তাও আছেন, যারা অপরাধ সংঘটনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এ ছিলেন। এই ১০ আসামি হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম এবং কে এম আজাদ; কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে)। এই আসামিরা র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস) ছিলেন।
আর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল, সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম ছিলেন র্যাবের ইন্টেলিজেন্স ইউংয়ের সাবেক পরিচালক। পলাতক আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ, র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের সাবেক পরিচালক ও সেনাবাহিনীর অবসরপাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার আসামিদের সবাইকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পরে মামলার তিন আসামি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান ও লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি করেন।
আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনতে পারেনি। ফলে বিচারের এই পর্যায়ে তাঁদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। এছাড়া ট্রাইব্যুনালকে আমি বলেছি, তাঁদের অব্যাহতির আবেদনটি সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনার পর যেন অভিযোগ গঠনের আদেশের তারিখ দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল মেহেরবানি করে আদেশের দিন দুইদিন পিছিয়ে ২৩ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন।’
গুমের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন আইন করেছে। গত ২ ডিসেম্বর গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয় সেনাবাহিনীর জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) ‘গুম ও নির্যাতনের’ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক-বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৯ জানুয়ারি এই মামলার ‘সূচনা বক্তব্য’ উপস্থাপনের তারিখ রাখা হয়েছে।
এবি/টিকে