নিজেদের স্থাপনায় হামলার পেছনে বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী ব্যক্তিরা জড়িত বলে ধারণা করছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।
একইসঙ্গে প্রথম আলোর কার্যালয় ও ডেইলি স্টার ভবনে আগুন দেওয়ার মতো ধ্বংসাত্মক কাজ স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার সমার্থক বলেও মনে করে সংগঠনটি।
রোববার ২১ ডিসেম্বর ছায়ানট থেকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ডেইলি স্টার চত্বরে হেনস্তা এবং শনিবার রাতে আগুন লাগিয়ে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয় ভস্মীভূত করার নিন্দাও জানিয়েছে তারা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একজোট অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন আক্রমণ করে। তারা ছয়তলা ভবনের প্রায় প্রতিটি কক্ষের বিপুল ক্ষতিসাধন করে, লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।হামলা শুরুর পর ঘটনার পরেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আগুন নিভিয়ে ফেলে। র্যাবও ভবন চত্বরে উপস্থিত ছিল। পরদিন শুক্রবার দুপুরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আসেন। তিনি ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ভবনের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের আগ্রহ ছায়ানট সংগঠকদের সামনে তুলে ধরেন।
হামলার পরের দিন শুক্রবার ছায়ানট ধানমণ্ডি থানায় মামলা করে। মামলায় ২৫০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট করে কারও নাম দেওয়া হয়নি।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ আসার পর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ হামলা চালানো হয়।
হামলার পরের দিন শুক্রবার ছায়ানটের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুকে উপলক্ষ করে একজোট লোক ছায়ানট-সংস্কৃতি ভবনে জোর করে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায়।
তবে হাদির মৃত্যুর সূত্রে সংস্কৃতি-ভবনে আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে বলে ছায়নাট মনে করে না। বাঙালি সংস্কৃতি-বিরোধী ব্যক্তিরা পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করেছে বলেই ধারণা ছায়ানটের। ছায়ানট স্বাভাবিক ও নিয়মিত কাজে ফিরে যেতে উন্মুখ। তবে ক্ষতিগ্রস্ত সামগ্রী সংগ্রহ করার আগে মেরামত কাজ খুবই দুরূহ। এর মধ্যেও ছায়ানট তার নির্ধারিত অনুষ্ঠান আয়োজনে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী।
“ভবন আক্রান্ত হওয়ায় দেশ ও বিদেশের প্রাক্তনী ও শিক্ষার্থীসহ বিপুল সংখ্যক শুভাকাঙ্ক্ষীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বার্তা পেয়ে ছায়ানট অভিভূত। অনেকে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
ছায়ানট বলছে, এটি স্বনির্ভর স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, একান্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো খাত ছাড়া নিয়মিত কার্যক্রমের জন্য আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করে অভ্যস্ত নয় তারা।
সমাজ ও সংস্কৃতির ‘এই সংকটকালে সর্বজনের পরামর্শ ও সব মহলের সংহতি’ প্রয়োজন বলে মনে করে ছায়ানট।
ছায়ানট বলেছে, সব প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি চর্চা এবং সংগীত সাধনা ও প্রসারে তাদের স্থির প্রত্যয়ে যাত্রায় অবিচল থাকবে।
হাদির মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। গভীর রাতে দেওয়া হয় আগুনও। ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ সময় হামলাকারীরা ‘ভারতের দালাল’, ‘ভুয়া’,’ নারায়ে তাকবীর’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ভাঙো’ এসব স্লোগান দেয়। প্রয়াত সন্জীদা খাতুনের প্রতিকৃতি কেটে নষ্ট করার সময় ‘নাস্তিক’ বলে সম্বোধন করে।
মিলনায়তনে হামলাকারীর যা পেয়েছেন সেটিই ভাঙচুর করেছেন। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানোর পাশাপাশি ও তছনছ করা হয় বই, কাগজপত্র।
ইউটি/টিএ