খেলা হয়েছে ৮৫৭ বল, দুই দিনে উইকেট পড়েছে ৩৬টি। পেসারদের জন্য প্রবল সহায়ক পিচের কঠিন চ্যালেঞ্জ সামলে, শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি ফুটেছে ইংল্যান্ডের মুখে। দীর্ঘ এক খরা কাটালেও বক্সিং ডে টেস্টের উইকেট নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়লেন না ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস।
মেলবোর্নে শনিবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিন ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড। ১৫ বছর আর ১৮ টেস্ট পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় তারা। তাসমান সাগর পারের দেশটিতে তাদের সবশেষ জয় ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারিতে, সিডনির ওই ম্যাচ জিতে স্মরণীয় এক সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের দল।
সেই থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জয় তো দূরের কথা, ম্যাচই জিততে পারছিল না ইংল্যান্ড। এবার প্রথম তিন টেস্ট হেরে অ্যাশেজের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। উঁকি দেয় অস্ট্রেলিয়ায় আবপর তাদের জয়হীন থাকার শঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত বহুল কাঙ্ক্ষিত জয়টি তারা তুলেই নিয়েছে।
এবারের অ্যাশেজের প্রথম টেস্টও শেষ হয়েছিল দুই দিনে। পার্থে হওয়া ৮৫২ বলের ওই ম্যাচে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজে একই সিরিজে একাধিক টেস্ট দুই দিনে শেষ হলো ১৩৭ বছর পর!
ঘাসের আস্তরন থাকা উইকেটে প্রথম দিনেই পড়ে ২০ উইকেট। প্রথম দিনের পর মতো দিনও পেসাররা পান যথেষ্ট সিম মুভমেন্ট, তাতে ব্যাটিং হয়ে ওঠে দুরূহ। দুই দলের কেউ পঞ্চাশও করতে পারেননি। ১৯৩২ সালের পর অস্ট্রেলিয়ায় কোনো টেস্টে দেখা গেল এমন কিছু।
প্রথম দিনের খেলার পরই মেলবোর্নের উইকেট নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ান সাবেক ক্রিকেটাররা। ম্যাচ জিতে এবার স্টোকসও সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করলেন মেলবোর্নের পিচকে।
“কঠিন সত্যিটা হলো, আপনি এমন কিছু সত্যিই চাইবেন না। বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ, চাইবেন না এটা দুই দিনের কম শেষ হয়ে যাক। এটা আদর্শ নয়। তবে খেলা শুরু হয়ে গেলে এটা তো আর পরিবর্তন করা যায় না। তাই যা সামনে সেটাতেই খেলতে হবে।”
“কিন্তু আমি নিশ্চিত, এটা যদি পৃথিবীর অন্য কোথাও হতো, তাহলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যেত। পাঁচ দিন ধরা খেলা উচিত এমন ম্যাচের জন্য এটা ভালো কিছু নয়। কিন্তু আমরা এমন ঘরানার ক্রিকেট খেলেছি, যেটায় শেষে ফল পক্ষে এসেছে।”
স্টোকসের এমন মন্তব্যের পর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, উপমহাদেশের কোনো পিচে দুই দিনে টেস্ট শেষ হলে কেমন প্রতিক্রিয়া হতো, সেটা বোঝাতে চাইছেন কিনা তিনি। ইংলিশ অলরাউন্ডারের উত্তর, “এটা আপনি বলেছেন, আমি না।”
এরপর তাকে জিজ্ঞাস করা হয়, ম্যাচ রেফারির কাছে পিচ নিয়ে কেমন মতামত দিবেন তিনি। স্টোকস সরাসরি বললেন, “এটা ভালো (ইতিবাচক) হবে না।”
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) কিউরেটর ম্যাট পেজ অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের আগে বলেছিলেন, গত বছরের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির জন্য এখানে যেমন উইকেট তৈরি করেছিলেন, এবারও তেমন কিছুর আশা করছেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচ পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে এবারের ম্যাচটি পঞ্চম দিন তো দূরের কথা, দ্বিতীয় দিনও পার করতে পারেনি।
মেলবোর্নে এবার উইকেটে ১০ মিলিমিটার ঘাস রেখে দিয়েছিলেন পেজ, যা গত বছরের টেস্টের তুলনায় ৩ মিলিমিটার বেশি। যেখানে দাপট দেখালেন দুই দলের পেসাররাই। তাতে অস্ট্রেলিয়া দুই ইনিংসে করতে পারে ১৫২ ও ১৩২ রান। প্রথম ইনিংসে ১১০ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড পরে ১৭৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতে যায়।
পিচের সরাসরি সমালোচনা করেননি অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। তবে, এমন উইকেটে খেলা যে চ্যালেঞ্জিং সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
“অবশ্যই, উইকেটটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। দুই দিনে ৩৬ উইকেট পড়েছে, সম্ভবত একটু বেশিই বোলারদের সহায়তা করেছে। গ্রাউন্ডসম্যানের জন্য কাজটা কঠিন। আমার মনে হয়, তিনি সবসময়ই সঠিক ভারসাম্যের একটি পিচ বানানোর চেষ্টা করেন। গত বছরের উইকেটটি ছিল অসাধারণ, পঞ্চম দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত খেলা হয়েছিল।”
সিডনিতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট শুরু আগামী ৪ জানুয়ারি।
এমআর/টিকে