ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জনসংখ্যার ধারা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তার দাবি, পরবর্তী আদমশুমারির তথ্য প্রকাশের সময়ের মধ্যে রাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম জনসংখ্যার হার আরও বেড়ে যেতে পারে এবং তা প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০২৭ সালে আসামে পরবর্তী আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হবে। খবর ইন্ডিয়া টুডে এনই
এক বিবৃতিতে বিজেপির এই মুখ্যমন্ত্রী ২০১১ সালের আদমশুমারির কথা উল্লেখ করেন। ওই আদমশুমারিতে আসামে মুসলিম জনসংখ্যা দেখানো হয়েছিল ৩৪ শতাংশ। তার ভাষায়, এদের মধ্যে ৩ শতাংশকে স্বদেশি আসামি মুসলমান হিসেবে আলাদা করলে বাকি ৩১ শতাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দাবি, ‘২০২১ সালে কোনও আদমশুমারি হয়নি। যখন ২০২৭ সালে আদমশুমারির রিপোর্ট আসবে, তখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছাবে।’
হিমন্ত শর্মার এই মন্তব্য আসামে অভিবাসন, পরিচয় ও নাগরিকত্ব ইস্যু ঘিরে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ককে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে, বিশেষ করে ‘বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের’ পুরোনো বিতর্কের প্রেক্ষাপটে। রাজ্যে জনসংখ্যা পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে এবং এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই পূর্বাভাস রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ কেউ জনসংখ্যা ইস্যুতে তার গুরুত্বারোপকে স্বাগত জানালেও, অন্যরা বলছেন এ ধরনের মন্তব্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে পারে।
এর আগে চলতি ডিসেম্বরেই আসামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলে রাজ্যটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা। সেসময় তিনি দাবি করেন, জনসংখ্যার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আসাম একসময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাংলাদেশের অংশ হয়ে যেতে পারে।
সেসময় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরও বলেন, ‘আসামে বর্তমানে জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। যদি এই সংখ্যা আরও ১০ শতাংশ বাড়ে, তাহলে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে (বাংলাদেশের সঙ্গে) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’। তিনি আরও বলেন, ‘এই কারণেই আমি গত পাঁচ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে জোরালোভাবে কথা বলে যাচ্ছি।’
এছাড়া ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে সাম্প্রতিক বক্তব্য ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা। তিনি বলেন, এ ধরনের হুমকি ভারত সহ্য করবে না। তার দাবি, বাংলাদেশের নেতারা যদি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিতে থাকেন, তাহলে দিল্লি আর বেশি দিন চুপ থাকবে না।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সেসময় আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আলাদা করে সেই দেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। বাংলাদেশ এমনটা কল্পনাও করতে পারে না এটা সম্পূর্ণ ভুল’।
এসএস/টিএ