দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ একাধিক বিধি-নিষেধ জারি করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সর্বসাধারণকে এসব নিয়মকানুন মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার শহর ও সমুদ্র সৈকতে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আতশবাজি, ফানুস, পটকা বা যেকোনো ধরনের ফায়ারওয়ার্ক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনা এড়াতে আতশবাজি ও ফটকা বিক্রির সব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জেলা পুলিশ উন্মুক্ত স্থান ও সড়কে কোনো কনসার্ট, নাচ, গান বা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন না করার কথা জানিয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলার সব বার ও মদের দোকান বন্ধ থাকবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আরো সতর্ক করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার বা উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, নাশকতা, সহিংসতা বা বোমা হামলা—যেকোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।
উচ্চ শব্দে গাড়ির হর্ন বাজানো, প্রতিযোগিতা, জয় রাইড ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালানোও এই সময় নিষিদ্ধ।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপনের জন্য আগত নারী পর্যটকদের কোনো ধরনের উত্ত্যক্তি বা ইভটিজিং থেকে বিরত থাকার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
হোটেল ও মোটেলগুলোতে যদি কোনো ইনডোর অনুষ্ঠান আয়োজন হয়, তা নিশ্চিত করতে এবং আগত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তথ্য ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চকে (ডিএসবি) জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন সবার জন্য আনন্দঘন হওয়া উচিত। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরা সর্বোচ্চ তৎপর। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
অপরদিকে, টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেব। পর্যটনের শহরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, পর্যটকরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে টুরিস্ট পুলিশের হেল্পলাইনে অবিলম্বে যোগাযোগ করবেন।
আমাদের লক্ষ্য, সবাই শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে উদ্যাপন উপভোগ করবে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশ একযোগে নির্দেশ দিয়েছেন যে, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন শুধু আনন্দের অনুষ্ঠান নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার একটি সময়। সবার সচেতনতা ও সহযোগিতায় কক্সবাজারে এই নববর্ষ উদযাপন হবে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে কক্সবাজারে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে জেলা পুলিশ। এর অংশ হিসেবে জেলা শহরের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশি চৌকি স্থাপন ও সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট, টহল ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো আয়োজন নেই। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে আসছেন। ছুটির দিনে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস জানান, কক্সবাজারের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষ নজরদারি রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটক ও সাধারণ মানুষের জানমাল নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শহরে বর্তমানে ২টি মোবাইল টিম, ৭টি টহল টিম ও ৪টি মোটরসাইকেল টিম দায়িত্ব পালন করছে।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে গত ৭-৮ বছর ধরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন হচ্ছে না। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে হোটেল ও রিসোর্টগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে বিভিন্ন আয়োজন করবে।
টিজে/এসএন