মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পর, এবার চীন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত বন্ধের মধ্যস্থতার কৃতিত্ব দাবি করেছে। এই বছরের শুরুতে কয়েকদিনের ভয়াবহ সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছিল দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের পর শান্তির মধ্যস্থতার দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যদিও নয়াদিল্লি এর তীব্র প্রতিবাদ করেছে। এই যুদ্ধবিরতিতে অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা উড়িয়ে দেয় ভারত।
এদিকে, ট্রাম্পের মতো, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বেইজিংকে উত্তর মিয়ানমারের উত্তেজনা, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে উত্তেজনা এবং ইরানের পারমাণবিক সমস্যাসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সংঘাতের জন্য শান্তি আলোচক হিসাবে তুলে ধরেছেন।
বেইজিংয়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং চীনের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সিম্পোজিয়ামে বক্তৃতাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ‘এই বছর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে স্থানীয় যুদ্ধ এবং সীমান্ত-আন্তঃসংঘাত যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতাও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তবে, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ এবং ন্যায্য অবস্থান গ্রহণ করেছি এবং লক্ষণ এবং মূল কারণ উভয়কেই মোকাবেলা করার দিকে মনোনিবেশ করেছি।’
ওয়াং ই তখন দাবি করেন যে ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এই বছর চীনের ‘মধ্যস্থতা’ করা হটস্পট ইস্যুগুলোর মধ্যে একটি।
তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমরা আমাদের মতো করে উত্তর মিয়ানমার, ইরানের পারমাণবিক সমস্যা, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সমস্যা এবং কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছি।’
এদিকে, নয়াদিল্লি বলে আসছে যে, ৭ মে থেকে শুরু হওয়া ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত দুই দেশের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও (সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক) এর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।
ভারত ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে যে, ভারত ও পাকিস্তান সম্পর্কিত বিষয়ে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কোনো স্থান নেই।
এদিকে, প্রতিবেদন বলছে, ৭-১০ মে ভারতের অপারেশন সিন্দুরে চীনের ভূমিকা গুরুতর তদন্ত এবং সমালোচনার মুখে পড়ে, বিশেষ করে ইসলামাবাদকে বেইজিং এর সামরিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি।
এতে আরও বলা হয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে, বেইজিং ৭ মে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উভয় পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিল।
সে সময়, ভারতের বিমান হামলা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চীন আজ সকালে ভারতের সামরিক অভিযানকে দুঃখজনক বলে মনে করে।’
এর আগে পহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়। হামলার সাথে পাকিস্তানের যোগ আছে অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায় নয়াদিল্লি। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দিলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে দুই দেশের। এরপর টানা কয়েকদিনের তীব্র সংঘাত শেষে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন দুই দেশের। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশ সংঘাত বন্ধে রাজি হয়।
আরপি/এসএন