সন্তানের রাগ কমানোর উপায়

রাগ এমন একটি বিষয়, যা সব বয়সী মানুষের মধ্যে কমবেশি আছে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে রাগের মাত্রা হয় ভিন্ন। শিশুদের রাগের কারণ হতে পারে তার বংশগত বৈশিষ্ট্য। শিশুরা দেখে শুনেও এই ধরনের কিছু আচরণ শিখে থাকে। ছোটবেলায় তার ইচ্ছা অনুযায়ী কোনো শখ যদি মেটাতে না পারা যায়। সেসব ক্ষোভ ছোট থেকে শিশুদের মধ্যে একটা চাপ সৃষ্টি করে থাকে।

শিশু যখন ছোট থাকে, তখন তাদের দুষ্টুমি, মজার কাণ্ড দেখে আমরা আনন্দ পাই। ফিরে যাই নিজেদের ছোটবেলার স্মৃতিতে। কিন্তু বছর দু’য়েক পার হতে না হতেই ছোট্ট সোনামণির দুরন্তপনায় ধৈর্য হারান অনেক বাবা-মা। বাচ্চা যত বড় হয়, ততই বাড়তে থাকে ওদের দুষ্টুমি। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন তা মাত্রাছাড়া না হয়। সময়মতো রাশ না ধরলে পরবর্তীকালে এটাই অনেক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। শাসন করতে হবে, কিন্তু কখনও মারধর নয়। দুষ্টু বাচ্চাকে বোঝান ধৈর্য ও আদরের মাধ্যমে।

বাবা-মা সন্তানের প্রথম শিক্ষক। তাই বাচ্চাকে কোনও নির্দেশ দেওয়ার আগে ভাবুন আপনি নিজেও সেটা পালন করেন কিনা। যদি বাড়ির বড়রা চিৎকার করে ঝগড়া করেন, একে অপরকে দোষারোপ করেন, রাগের মাথায় জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলেন, তাহলে সন্তানেরও কিন্তু এ ধরনের অভ্যাসই হবে। রেগে যাওয়া শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ হয় না। তাকে অনেক সময় অনেক বেশি আদর দিয়েও রাগ কমানো যায় না। এজন্য দরকার সুন্দর পরিকল্পনা। তবে সব কিছুর আগে শিশুর রাগ করার কারণ বুঝতে চেষ্টা করুন। সব ধরনের কারণ সামনে রেখে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে হবে।



আপনার করণীয়

  • সব বাচ্চা একরকম হয় না। তাই প্রথমেই বাচ্চাকে ভাল করে বুঝুন। খেলতে গিয়ে কোনও জিনিস ভেঙে ফেলা, আর ইচ্ছা করে কোনও জিনিস নষ্ট করা কিন্তু এক নয়। প্রথম ক্ষেত্রে সাবধান করাই যথেষ্ট। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শাসনের প্রয়োজন আছে। বাচ্চাকে দুষ্টুমির খারাপ দিকগুলি বোঝান। ভালমন্দের বোধটা ছোটবেলা থেকেই ওর মনের মধ্যে গেঁথে দিন। মনীষীদের ছোটবেলার গল্প বলুন।
  • কিছু বাচ্চা খুব চঞ্চল হয়, এক মুহূর্ত স্থির থাকতে পারে না। এরকম ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ছুটোছুটি করে খেলাধুলো করতে উৎসাহ দিন। প্রয়োজনে ক্রিকেট, ফুটবল, ক্যারাটেতে ভর্তি করে দিন। দেখবেন বাচ্চার অহেতুক দুষ্টুমির প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।
  • ছোটদের ছোট ছোট চাহিদা এবং আবদারের খেয়াল রাখুন। কিন্তু তাই বলে যখন যা চাইছে তাই কিনে দেবেন না। দুষ্টুমি কমাতে যদি উপহার কিনে দেন তাহলে হিতে বিপরীত হয়। সন্তানকে আদর করুন, বায়না মেটান। কিন্তু কখনই অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেবেন না। উপহার দেওয়ার আগে বাচ্চার চাহিদা তৈরি হতে দিন। এতে শিশু পছন্দের জিনিস হাতে পাওয়ার আনন্দ অনুভব করতে পারবে।
  • বাচ্চা কেন দুষ্টুমি করছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা পরিবারের সকলের কাছ থেকে গুরুত্ব পেতে নানারকম দুষ্টুমি করে থাকে। ওকে সময় দিন। প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনে একসঙ্গে সন্তানের সঙ্গে কাটান। পরিবারের সকলে মিলে নানারকমের বোর্ড গেম খেলতে পারেন। বাবা-মা একসঙ্গে সন্তানের সঙ্গে গল্প করুন। দেখবেন আপনার সন্তান দারুণ উপভোগ করবে সময়টা।
  • সন্তান দুষ্টুমি করলে ওকে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝান। রাস্তায়, অন্য কারো বাড়িতে কিংবা বাড়িতে অন্য কারো উপস্থিতিতে বাচ্চাকে বকবেন না। মনে রাখবেন ছোটদের কিন্তু আত্মসম্মানবোধ প্রবল। এরকম করলে বাচ্চা আরও বেশি জেদি হয়ে ওঠে। ওকে আলাদা করে ডেকে কথা বলুন। ওর কথা মন দিয়ে শুনুন। আদর-স্নেহ দিয়ে বোঝালে বাচ্চারা অনেক সহজে বুঝবে।
  • মনে রাখবেন বাচ্চারা কোমলমতি। এক ভুল বারবার করতেই পারে। তাই বলে ধৈর্য হারিয়ে ফেললে চলবে না। ওকে সুযোগ দিন। তবে খেয়াল রাখুন কাজটা যে ভুল বা অন্যায় সেই বোধটা যেন ওর মধ্যে গড়ে ওঠে।
  • বাচ্চা একটু বড় হলে ওকে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। জামাকাপড় বা পছন্দসই খেলাধুলা ওকেই বেছে নিতে দিন। একা হোমওয়ার্ক করতে উৎসাহ দিন।
  • ঘরের ছোটখাটো কাজের দায়িত্ব দিন সন্তানকে। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার কাজ সন্তানের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে। পাশাপাশি বাচ্চার মধ্যে ডিসিপ্লিন গড়ে তুলুন। নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে ওঠা, পড়তে বসা, খাওয়া বা খেলাধুলার অভ্যাস করান। ছোটবেলা থেকে ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকলে সন্তানের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়।
  • সন্তানের ভাল কাজের প্রশংসা করতে ভুলবেন না।
  • পরিবারের কোনো সমস্যা শিশুর সামনে প্রকাশ করবেন না।
  • নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হলে তার জের শিশুর সামনে প্রকাশ করবেন না।
  • শিশু রেগে গেলে তখনই তাকে গায়ে হাত তুলবেন না। অযথা বাজে কথা বলবেন না।

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সরকারি কর্মকর্তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ বন্ধে আইন করল যুক্তরাজ্য Nov 04, 2025
img
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৩৮৫ জনের তালিকা প্রকাশ করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় Nov 04, 2025
img
প্রথমবারের মতো পরিচালকের আসনে ইমন সাহা Nov 04, 2025
img
ব্রাকসু নির্বাচন পরিচালনায় ৬ সদস্যের কমিশন গঠিত Nov 04, 2025
img
বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে জটিলতার সমাধান চান মার্কিন তুলা রপ্তানিকারকরা Nov 04, 2025
img
আবারও উপস্থাপনায় ফিরছেন তাহসান খান Nov 04, 2025
img
ভিসা বাতিলের পরিকল্পনা কানাডার, ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ Nov 04, 2025
img
মেয়ের সামনেই অটোচালকের হাতে হেনস্তার শিকার অভিনেত্রী Nov 04, 2025
img
জাতীয়-আন্তর্জাতিক দিবসের সংশোধিত তালিকা প্রকাশিত Nov 04, 2025
img
ঠাকুরগাঁওয়ে চিচিঙ্গার কেজি ২, লাউ ৪ টাকা Nov 04, 2025
img
দেশে ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে চান আমিনুল হক Nov 04, 2025
img
সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে মুখ খুললেন অপরাজিতা আঢ্য Nov 04, 2025
img
মারা গেছেন তিনবার অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ডায়ান ল্যাড Nov 04, 2025
img
রাজধানীতে এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ Nov 04, 2025
img
আবুধাবি টি-টেনে একই দলে সাকিব ও জেসন রয় Nov 04, 2025
img
৩ শতাধিক বিচারককে জেলা জজ পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত Nov 04, 2025
img
নীরবতায় কেটে গেল প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন Nov 04, 2025
img
না ফেরার দেশে বরেণ্য চিত্রশিল্পী মতলুব আলী Nov 04, 2025
img
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা Nov 04, 2025
img
চাঁদাবাজি-পেশিশক্তির বিরুদ্ধে জনসেবা ও সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে লড়তে হবে: চরমোনাই পীর Nov 04, 2025