অর্থ পাচার ঠেকাতে নতুন বিভাগ খুলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ পাচার ঠেকাতে নতুন করে একটি বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে ২২ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে এই বিভাগের কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

মূলত আওয়ামী লীগের আমলে দেশের ব্যাংক খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে পাচার বিষয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এই নতুন বিভাগের সূত্রপাত।

দেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন এই বিভাগ গঠন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভাগটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তদারকি, তাদের অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ, অনিয়মের জরিমানা ও আর্থিক খাতে নতুন প্রতিষ্ঠান আসার বিষয়ে নীতি গ্রহণের পাশাপাশি আগের প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের সুপারিশ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, অনিয়মের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার ক্ষমতাও থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আমার জানা নেই। তবে বিএফআইইউ দেশের সার্বিক মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থাগুলোর ওপর তদারকি দায়িত্ব পালন করবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অর্থ পাচারের বেশিরভাগই হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে কারসাজি করে। এ জন্য অর্থ পাচার ঠেকানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও দায় রয়েছে। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই নতুন বিভাগটি করা হচ্ছে। এটি নিয়ে অনেকদিন থেকেই আলোচনা চলছিল।

তিনি বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে কাজ করবে। আর দেশের সার্বিক অর্থ পাচারের তদারকির জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর অধীনে কাজ করবে বিএফআইইউ। মূলত বিএফআইইউ আইনদ্বারা গঠিত একটি সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু সংস্থাটিকে কর্মকর্তা দিয়ে সহায়তা করে। ভবিষ্যতে এটি বন্ধও হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ এক প্রজ্ঞাপনে নতুন সংস্থার কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, আর্থিক খাতের যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে রিপোর্ট দেয়, তারা যেন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে, তা দেখতে ও তদারকি করবে নতুন বিভাগ। রিপোর্ট প্রদানকারী এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ঠিকভাবে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কি না, তারও তদারকি করবে। এর জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে, সেই তথ্য পর্যালোচনা করবে এবং যদি প্রয়োজন মনে হয়, তাহলে ওই সংস্থাগুলোতে পরিদর্শনও করবে। রিপোর্ট প্রদানকারী এসব সংস্থা যদি আইন ভঙ্গ করে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ৫০ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। এ ছাড়া, তাদের শাখা, সার্ভিস সেন্টার, বুথ বা এজেন্টের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশও করবে।

এতে আরও বলা হয়, নতুন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বাজারে প্রবেশ, তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ম তৈরি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ওই নিয়ম কার্যকর করারও দায়িত্ব থাকবে সংস্থাটির ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব সংস্থা বা সেক্টর (ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান) পরিচালনা করে, তাদের মধ্যে মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের ঝুঁকি চিহ্নিত করবে। অর্থাৎ, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ধরনের কার্যক্রম হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা পরীক্ষা করবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেয়া নিয়মাবলি বা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার জন্য নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোকে (ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান) নির্দেশ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে তাদের সেই নির্দেশনা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করবে। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর সংগঠনকে (যেমন, বিএবি-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস) মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধে সাহায্য করতে অংশগ্রহণ করাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর পরিদর্শন করবে, তত্ত্বাবধান করবে এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এই পরিদর্শনগুলোর সময়, তারা মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধের ব্যবস্থা কতটা সঠিকভাবে অনুসরণ হচ্ছে, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। যদি কোনো দুর্বলতা দেখা দেয়, তাহলে তা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) জানাবে। একই সঙ্গে নিয়মিতভাবে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে ট্রেনিং, কর্মশালা, সেমিনার বা সচেতনতা বৃদ্ধি প্রোগ্রাম আয়োজন করবে। এ ছাড়া, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা নির্ধারণ করবে, সে অনুযায়ী অন্য কোনো কাজও করতে হবে।

এফ পি/ এস এন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ড্র: লিগপর্বেই মুখোমুখি রিয়াল, পিএসজি ও বার্সা Aug 29, 2025
img

গাজীপুরে লাইনচ্যুত কোচ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক Aug 29, 2025
img
জাসদ সভাপতির ভাইকে ‘সমাদর’, থানার তিন কর্মকর্তা বদলি Aug 29, 2025
img
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামলেন ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর Aug 29, 2025
img
শিবির ট্যাগ দিয়ে বিতর্কে, দুঃখ প্রকাশ করলেন ডাকসু এজিএস প্রার্থী মায়েদ Aug 29, 2025
img
দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন বেগম খালেদা জিয়া Aug 29, 2025
img
৫৬৪ কেজি পাঠ্যবই বিক্রি, প্রধান শিক্ষক ও ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার Aug 29, 2025
img

দাবি ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দিন শিশিরের

শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরা ছবিটি আসল, পুলিশের দাবি মিথ্যা Aug 29, 2025
img
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া Aug 29, 2025
img
লিবিয়ার ডিটেনশন থেকে দেশে ফিরছে ১৬১ বাংলাদেশি Aug 29, 2025
img
বাণিজ্য শুল্ক ঘিরে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে যুক্তরাষ্ট্র Aug 29, 2025
img
মৌলিক সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন মানবে না : গোলাম পরওয়ার Aug 28, 2025
img
লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা Aug 28, 2025
img
স্বর্ণজয়ী ফাতেমা মুজিব ছাড়াই শুরু হচ্ছে ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ Aug 28, 2025
কালো-সোনালি পোশাকে জয়া, ঝলকে উঠল সৌন্দর্য! Aug 28, 2025
সুরা ফাতেহা নতুনভাবে আবিষ্কার Aug 28, 2025
img
জাতীয় দলের প্রস্তুতিতে যোগ দিতে আরব আমিরাতে রশিদ Aug 28, 2025
img

জিল্লুর রহমান

সম্পর্ক পুনর্গঠন চাইলে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতেই হবে Aug 28, 2025
img
যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিলো রাশিয়া Aug 28, 2025
img
মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে কেউ পার পাবে না : প্রিন্স Aug 28, 2025