‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে’

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে সফলভাবে উত্তরণের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা এই বিষয়ে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছি।”

সম্প্রতি সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে জাতীয় সংবাদ সংস্থার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ২০২৬ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের বিভিন্ন দিক এবং বেসরকারি খাতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বেসরকারি খাত কেন দীর্ঘদিন ধরে নিরব ছিল এবং এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো জোরালো অবস্থান নেয়নি।

এর আগে, ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারী সহ বিভিন্ন কারণে এটি বিলম্বিত হয়। ‘এটা সত্য যে, আমি বেসরকারি খাতের দাবির সাথে একমত বা দ্বিমত পোষণ করতে পারছি না। সুতরাং, এটি একটি ‘দ্বান্দ্বিক’ পরিস্থিতি।’

বশির উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা যদি তাদের সাথে একমত হই, তাহলে ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো আবার ঘুমিয়ে পড়বে। উত্তরণ বিলম্বিত করা মোটেও সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। তাদের (বেসরকারি খাত) এটি মেনে নিতে হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডেই উত্তীর্ণ হয়েছে যদিও এটি একটি ভিন্ন যুক্তি যে, সেগুলো সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নাকি ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের অনিয়মের কারণে সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমাদের টিমের সদস্যরা আন্তরিকতা ও দেশপ্রেমের সাথে কঠোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ইনশাআল্লাহ, আশা করি আমরা দেশের জন্য একটি কল্যাণকর পরিস্থিতিতে পৌঁছাতে সক্ষম হব।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদিও সব সংস্কার করা সম্ভব নয়, তবে অবশ্যই কিছু বাস্তবায়ন করা হবে। বাকিগুলো গতিশীলভাবে এগিয়ে যাবে।
এদিকে, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ সহ অনেকেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া কয়েক বছর পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে মহামারীর তীব্র প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যমান উচ্চ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলার জন্য সময়ের প্রয়োজন।

সম্প্রতি এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, উত্তরণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সময়সূচী মেনে জাতিসংঘের মর্যাদা অর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া শিল্পের উপর প্রভাব ফেলবে কিনা সে বিষয়ে সরকার বিশেষজ্ঞদের মতামত বিবেচনা করে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে দেয়া সুবিধাগুলো উত্তরণের পরও তিন বছর ধরে বহাল থাকবে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উত্তরণ লাভের জন্য তিনটি পূর্বশর্তই পূরণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর অর্থনীতির ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে শূন্য-শুল্ক ও কোটা সুবিধার মতো বিভিন্ন সুবিধা পেতে দেশটি ১৯৭৫ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিল।

এই সুবিধাগুলো বাংলাদেশকে বর্তমানে চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম করেছে।

এলডিসি-পরবর্তী অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশ বার্ষিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্য হারাতে পারে। এ পর্যায়ে বাংলাদেশকে পণ্য সরবরাহের উপর কমপক্ষে ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের ৭৮ শতাংশ রপ্তানি ৩৮টি দেশে স্বল্পোন্নত বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতোমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছে যে, তারা ২০২৯ সাল পর্যন্ত আরও তিন বছর ধরে বাংলাদেশের জন্য এলডিসি বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখবে, যা একটি মসৃণ উত্তরণের ক্ষেত্রে সক্ষম করার জন্য একটি গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচিত হবে।
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া কিছু শর্ত ছাড়া একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


এসএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে আম্পায়ারদের তালিকা প্রকাশ Nov 09, 2025
img
সিরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায় Nov 09, 2025
img
৫২২ ঘণ্টা হলেও কিছু করার নেই: তারেকের উদ্দেশে ইসি সচিব Nov 09, 2025
img
বাগেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ Nov 09, 2025
img
বিপিএলে নিলাম চায় গভর্নিং কাউন্সিল Nov 09, 2025
img
আইন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার কার্যক্রম Nov 09, 2025
img
‘ফজু পাগলা’ উপাধি পেয়ে আনন্দিত ফজলুর রহমান Nov 09, 2025
img
জনগণ গণভোট-সনদ বোঝে না : মির্জা ফখরুল Nov 09, 2025
img
আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক Nov 09, 2025
img
চানখারপুলের হত্যা মামলার ১৪তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ Nov 09, 2025
img
বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন জোকোভিচ Nov 09, 2025
img
স্বরাষ্ট্র ও প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চান শিক্ষকরা Nov 09, 2025
img
ঘরের ছেলে শান্তকে দলে ভেড়াল রাজশাহী Nov 09, 2025
img
দেশজুড়ে আগামী তিন দিন কমতে পারে তাপমাত্রা Nov 09, 2025
img
ঝড় তুলেছে বিজয়ের নতুন গান ‘থালাপতি কাচেরি’ Nov 09, 2025
img
ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হতে যাচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ Nov 09, 2025
img
এবার অ্যানিমেশন সিনেমায় শ্রদ্ধা কাপুর Nov 09, 2025
img
আর্জেন্টিনা দলে থেকে নাম সরিয়ে নিলেন এনজো ফার্নান্দেজ Nov 09, 2025
img
ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামকে ‘আবর্জনার ভাগাড়’ বললেন নাপোলি মালিক Nov 09, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান শাটডাউনের কারণে বিমানবন্দরগুলোয় বাড়ছে ভোগান্তি Nov 09, 2025