যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ : নতুন পরিকল্পনায় হাঁটছে এনবিআর

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। এর মধ্যে বড় হুমকিতে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

নতুন নিয়মে রপ্তানি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩৭ শতাংশ শুল্ক গুণতে হবে বাংলাদেশকে। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে উচ্চ শুল্ক কমানোর অনুরোধ বা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।

উচ্চ শুল্কের বিষয়টি সুরাহা না হলেও রপ্তানি আয় ধরে রাখার জন্য করণীয় ঠিক করতে দফায় দফায় বৈঠক করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনসহ খাত সংশ্লিষ্টরাও। সংকট মোকাবিলায় বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে জানা গেছে। রপ্তানি ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া কাঁচামাল ভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা (সদস্য) ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে উচ্চ শুল্ক কমানোর অনুরোধ বা উদ্যোগটি অবশ্যই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেখা হচ্ছে। তবে উচ্চ শুল্কের বিষয়টি সুরাহা না হলেও রপ্তানি আয় ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও অনেক কিছু করার রয়েছে। এনবিআর এমন কিছু পণ্যের কাঁচামাল চিহ্নিত করছে, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকেই বেশি আমদানি হয়। আমদানি হওয়া ওই কাঁচামালগুলোকে সবার আগে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে আবার যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি করা হচ্ছে। ওই পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি অধিক পরিমাণ আমদানির সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যতটুকু জানি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ মার্কিন উপাদান বা কাঁচামাল থাকলে, ওই পণ্য ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় পায়। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির গতি বাড়াতে দ্রুত গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানা গেছে। যদিও ওই সিদ্ধান্ত পুরাতন, তবে বাস্তবায়ন হয়নি। এখন দ্রুত গতিতে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ বা তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

আবার রাজস্ব আহরণে বড় প্রভাব না পড়ে এমন পণ্যের তালিকা তৈরি করে শুল্ক হ্রাস বা শূন্য করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। তবে অনুমানের ভিত্তিতে শুল্ক কমালে চলবে না। যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, তারা কোন কোন পণ্যে শুল্ক ছাড় চায় তা জেনে আলোচনার মাধ্যমে সামনে এগোতে হবে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল রয়েছে ২৯ কোটি ডলারের। বাকি ২৬২ কোটি ডলারের কাঁচামাল এসেছে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য। অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি হওয়া ২৬২ কোটি ডলারের পণ্যের মধ্যে আবার ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক-কর দিতে হয়নি। যেমন গম ও তুলার মতো পণ্যে শুল্ক-কর নেই। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে গড়ে ৪.৪৮ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কাস্টমস শুল্ক-কর আদায় করে ১ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম ও ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং গাড়ি, পেট্রোলিয়াম, লোহা ও ইস্পাত ইত্যাদি পণ্য। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য ইত্যাদি।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য। বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলার।

এদিকে গতকাল (রোববার) বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক হয়। যেখানে এনবিআর ছাড়াও রপ্তানিকারক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারাও অংশ নেন। বৈঠকে এনবিআর ও বিডার পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ৩০টি পণ্যে তুলনামূলকভাবে উচ্চ শুল্কহার চিহ্নিত করেছে বলে জানা গেছে।

ওই পণ্যের মধ্যে রয়েছে জেনারেশন ও জেনারেটিং সেট, ভালভ, গরুর মাংস, কৃষিপণ্য, কিছু কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি। এসব পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্কহার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে তুলা, স্ক্র্যাপ, বোয়িং বিমানের যন্ত্রাংশ ও মূলধনী যন্ত্রপাতি—যেগুলোর বেশিরভাগই শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাঝে মাঝে উচ্চমূল্যের গাড়িও আমদানি করে বাংলাদেশ।

বৈঠকে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, যেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো সম্ভব এবং তাতে রাজস্ব আহরণে বড় প্রভাব পড়বে না, এমন পণ্যের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এসব পণ্যে শুল্ক হ্রাস বা শূন্য করার বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টাঙ্গাইল এলজিইডিতে দুদকের অভিযান, মিলেছে দুর্নীতির সত্যতা Apr 29, 2025
সারজিসের চ্যালেঞ্জের জবাবে চা/ঞ্চ'ল্যকর তথ্য ফাঁ/স করলেন রাশেদ Apr 29, 2025
img
করিডর নিয়ে ম্যান্ডেটহীন সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন নয় : সালাহউদ্দিন Apr 29, 2025
কিসের ভিত্তিতে পদক পেল পুলিশ কর্মকর্তা Apr 29, 2025
চীনের বিমানঘাঁটিতে ট্রাম্পের অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন Apr 29, 2025
আপনি কি তেলাপোকার ফ্যাক্টরি দিছেন? হোটেল মালিককে ভোক্তার কর্মকর্তা Apr 29, 2025
অভিনেতা সিদ্দিককে থানায় সোপর্দ করে যা বললেন ছাত্রদল নেতা আমান Apr 29, 2025
শেখ হাসিনার মেয়ের ৫৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ Apr 29, 2025
img
বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার Apr 29, 2025
img
পিএসসি সংস্কারের ৮ দফা বাস্তবায়নে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম Apr 29, 2025