ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, 'পাকিস্তান প্রথম হামলা করবে না, পিছুও হটবে না' : ইসাক দার

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে প্রথমে আক্রমণ করবে না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দার।

তবে যুদ্ধ যদি শুরু হয়েই যায়, তাহলে পাকিস্তান পিছু হটবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সিনেট অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ইসাক দার জানান, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠতে থাকায় উদ্বেগ বোধ করছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব।

ইতোমধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, কুয়েত, বাহরাইন এবং হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা টেলিফোন করে তাদের উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন।

“আমি তাদের বলেছি যে এই পরিস্থিতিতে প্রথম হামলা কখনও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে হবে না। তবে যদি সত্যিই যুদ্ধ বেঁধে যায়, তাহলে পাকিস্তান পিছু হটবে না।”

সিনেট অধিবেশনে ইসাক দার সাম্প্রতিক পহেলগাম হামলার ঘটনার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ঘটনা ভারতের পূর্ব পরিকল্পিত কী না সে সংক্রান্ত সংশয়ও প্রকাশ করেছেন তিনি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এর আগে যখন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল, সে সময়ও এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল ভারত এবং এ ঘটনার কিছুদিন পর সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা বিলুপ্ত করেছিলো।”

“সম্প্রতি পহেলগামে যে হামলার ঘটনা ঘটল, তার জেরে ভারত সিন্ধু নদের পানিচুক্তি স্থগিত করেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে চুক্তি স্থগিতের জন্য অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পহেলগাম হামলাকে। আমার সন্দেহ হচ্ছে যে পহেলগামের এই হামলা কি সত্যিই জঙ্গি হামলা ছিল, না কি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পিত কোনো ঘটনা এটি?”

গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পহেলগাঁও জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।

স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলাকারীরা অন্তত ২৬ পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের গুলিতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।

ভয়াবহ এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

এ হামলাকে ঘিরে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এই আবহেই গতকাল মঙ্গলবার ভারতের শীর্ষ সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পাকিস্তান হামলার জন্য সবুজ সংকেত তিনি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আরএ/টিএ

Share this news on: