সাত দিনের আলটিমেটাম শেষে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিএসসি সংস্কার আন্দোলনের নেতারা।
বুধবার (৭ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি সংস্কার আন্দোলন কর্তৃক প্রদত্ত ৭ দিনের আল্টিমেটাম পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে বিক্ষোভের ডাক দেয় আন্দোলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, পিএসসি কর্তৃক সংস্কার কমিশন গঠনের আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন ভাঙানো হয়েছিল। পিএসসি সংস্কার আন্দোলনের দেওয়া ৭ দিনের আল্টিমেটাম শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত পিএসসি সংস্কার বিষয়ে কোনো আপডেট দেওয়া হয়নি আন্দোলনকারীদের।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থী সিরাজুস সালেহীন শিয়ন বলেন, আমরা আন্দোলন করছি পিএসসির দুর্নীতি ও প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে। ৪৬তম বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায়। যারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং প্রশ্ন যারা কিনেছেন, উভয় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা অনশনে বসেছিলাম। অনশন ভাঙাতে সংস্কার কমিশনের কথা বলা হলেও এ কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা দেখিনি।
পিএসসি সংস্কার আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, একটি সংস্কার কমিশন গঠন করে আমাদের ৮ দফা দাবির সমাধান করা হবে। অথচ সংস্কার কমিশনের আমরা কোনো অগ্রগতি পায়নি। ৭ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি অনশন ভাঙার পর থেকে আমাদের সঙ্গে কোনোরূপ যোগাযোগ করা হয়নি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা করা হবে সুস্পষ্টভাবে করতে হবে। কোনো প্রকার ছলচাতুরী চলবে না। প্রাক ভ্যারিফিকেশন নামক প্রহসন বাতিল করে পিএসসিকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রশ্নফাঁস ও নিয়োগ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট এখনো বিরাজমান রয়েছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতেই পিএসসি সংস্কার আন্দোলনের লড়াই চলমান। দল মত নির্বিশেষে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার নামে কোনোভাবে দলীয় বিবেচনা বা প্রভাব পিএসসিতে থাকুক তা আমরা হতে দেবো না।
এ সময় সংবাদ সম্মেলন থেকে ৮ মে বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে পিএসসি সংস্কার আন্দোলনের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
যে আটটি দফা দাবি আন্দোলনকারীরা উল্লেখ করেন তা হলো-
প্রত্যেকটা বিসিএস এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ করা এবং লিখিত পরীক্ষার ন্যূনতম দুই মাস আগে রুটিন ঘোষণা করতে হবে।
ভেরিফিকেশন, হয়রানি লাঘবের ব্যবস্থা করতে হবে। চূড়ান্ত ফলাফলের আগে প্রাক-যাচাই প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। ফৌজদারি মামলা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার দণ্ডিত, সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো প্রার্থীর গেজেট আটকানো যাবে না। যদি কোনো প্রার্থীর গেজেট আটকানো হয়, তাহলে তার সুস্পষ্ট কারণ প্রকাশ করতে হবে এবং গেজেট আটকানোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকতে হবে।
"নন ক্যাডার বিধি-২০২৩" সংশোধন (প্রয়োজন সাপেক্ষে বাতিল) করে বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবার চাকরির বন্দোবস্ত করতে হবে।
৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার পূর্বে-
ক) প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের বহিষ্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) ভবিষ্যতে ৪৬তম বিসিএস বাতিলের কোনো সম্ভাবনা তৈরি হবে না এই মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
গ) আগামী জুন মাসের মধ্যে ৪৪তম বিসিএস-এর চূড়ান্ত ফলাফল (ভাইভায় উত্তীর্ণ) প্রকাশ করে জুলাইয়ের শুরুতে ৪৬তম বিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করতে হবে।
৪৫তম বিসিএস থেকে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ১০০ করতে হবে। ৪৫তম বিসিএস লিখিত ফলাফল জুনের মধ্যে প্রকাশ করে ২০২৫ সালের মধ্যেই চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।
ভাইভার পূর্বে ক্যাডার পছন্দক্রম পুনরায় পছন্দের সুযোগ দিতে হবে। ৪৫তম বিসিএস থেকে ভাইভার পূর্বে পুনরায় পছন্দের সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
বিসিএস জট নিরসনে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে, অস্থায়ীভাবে কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যসংখ্যার সীমা ২৫-৩০ জনে উন্নীতকরণ।
লিখিত খাতার মূল্যায়নে গতিময়তা, নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা আনয়নে কমিশনে বসে খাতা দেখার ব্যবস্থা করা।
এফপি/এস এন