গন্ধগোকুলের মল থেকে তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে দামি কফি ‘কপি লুয়াক’

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কফির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত "কপি লুয়াক"। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই কফি প্রস্তুত হয় একটি নির্দিষ্ট বন্যপ্রাণী খাটাশ বা গন্ধগোকুলের মল থেকে সংগ্রহ করা কফি বিন দিয়ে। প্রতিকেজি কপি লুয়াকের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর এক কাপ কফির মূল্য হতে পারে ৩৫০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

“কপি লুয়াক” নামটি এসেছে ইন্দোনেশিয়ান শব্দ থেকে— যেখানে “কপি” অর্থ কফি এবং “লুয়াক” হলো খাটাশের স্থানীয় নাম। এই প্রাণীটি বাংলাদেশে ‘খাটাশ’ নামেই অধিক পরিচিত। ঔপনিবেশিক যুগে ইন্দোনেশিয়ায় কফি চাষ শুরু হয়। সেসময় স্থানীয় কৃষকরা নিজেরা কফি সংগ্রহ করতে না পারলেও খেয়াল করেন, বন্য খাটাশরা কফি ফল খায় এবং তাদের মলের সঙ্গে হজম না হওয়া কফি বিন বেরিয়ে আসে। পরে কৃষকরা সেই বিন সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে ভেজে কফি তৈরি করেন, যার স্বাদ ছিল এতটাই অনন্য যে ধীরে ধীরে তা অভিজাত শ্রেণির মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

গন্ধগোকুল কফি গাছের সবচেয়ে পাকা ও মিষ্টি চেরি ফল বেছে খায়। তাদের হজমপ্রক্রিয়ায় ফলের বাইরের অংশ হজম হলেও ভেতরের কফি বিন অক্ষত থেকে যায়। তবে তাদের পেটে থাকা এনজাইমের কারণে কফির প্রোটিন কিছুটা ভেঙে যায়, যা কফির স্বাদে এনে দেয় বিশেষ মসৃণতা ও তিক্ততা হ্রাস করে। ফলে এই কফি হয় তুলনামূলকভাবে কোমল, কম অ্যাসিডিক এবং পাকস্থলীর জন্য আরামদায়ক।

প্রাকৃতিকভাবে এই কফি সংগ্রহের পর পুরোপুরি পরিষ্কার, শুকানো, ভাজা ও প্যাকেটজাত করা হয়। তবে আধুনিক সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য অনেক খামারে খাটাশকে খাঁচায় রেখে জোরপূর্বক কফি চেরি খাওয়ানো হয়, যা প্রাণীটির স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের বন্দি পরিবেশে উৎপাদিত কফির মানও প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত কফির তুলনায় অনেক নিচু।

এই কফির সীমিত উৎপাদন ও প্রস্তুতির জটিলতা এটিকে আরও বিরল ও মূল্যবান করে তুলেছে। তবে এর উচ্চমূল্যের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সাধারণ কফিকে “কপি লুয়াক” নামে বাজারজাত করছে। পাশাপাশি, বন্যপ্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং বন উজাড়ের কারণে পরিবেশগত উদ্বেগও ক্রমবর্ধমান।

এই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে খাটাশের হজম এনজাইম অনুকরণ করে কফি তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা এড়ানো যায়। ইন্দোনেশিয়ার যেসব অঞ্চলে কপি লুয়াক উৎপাদন হয়, সেগুলো এখন রীতিমতো পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

তবে এই কফির ধর্মীয় গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, যেহেতু এটি প্রাণীর মল থেকে সংগ্রহ করা, তাই তা পান করা উচিত নয়। অন্যদিকে, অনেক পণ্ডিত মনে করেন— যেহেতু প্রক্রিয়াকরণে মলের কোনো অংশ ব্যবহার করা হয় না, তাই এটি হালাল হতে পারে।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টালিউডে অভিনেতা অনির্বাণকে বয়কটের ডাক May 14, 2025
img
আহত ৩৬ জন ঢামেকে, কাকরাইল না ছাড়ার ঘোষণা জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের May 14, 2025
img
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ ছাত্রসমাজই ঠিক করবে: ড. ইউনূস May 14, 2025
img
আইপিএলে দল পেলেন মুস্তাফিজ May 14, 2025
img
জুনে মিলবে আইএমএফের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১.৩ বিলিয়ন ডলার May 14, 2025
img
‘অপারেশন সিঁদুর উদযাপন করতে আপনাদের স্টেডিয়ামে বিস্ফোরণ ঘটাব’ May 14, 2025
img
সাম্যের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করল ঢাবি প্রশাসন May 14, 2025
img
চা না খেয়ে ঢুকতে মানা! শাশ্বতের বাংলাদেশ যাত্রা শুরু অদ্ভুত অভিজ্ঞতায় May 14, 2025
img
ট্রাম্পকে শিল্পের শত্রু বললেন ডি নিরো May 14, 2025
img
ক্রিকেটের নামে অশ্লীলতা, ৬ অভিনেত্রী ও ৩ নির্মাতাকে লিগ্যাল নোটিশ May 14, 2025