মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষ, আহত ১৫

পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় একটি কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়ন ফরম তোলা নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুই দলের অফিস এবং ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।


এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮-১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের জন্য কলেজ থেকে তফসিল ঘোষণা করা হয়। অভিভাবক সদস্য মনোনয়নপত্র উত্তোলনের শেষদিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন দুপুরে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আছিম উদ্দিন অভিভাবক সদস্য পদের মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন। তার সঙ্গে আরও দুজন বিএনপি সমর্থিত অভিভাবকও মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন।

কিছুক্ষণ পর জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির নকিবুল্লাহ, সাবেক আমির নাসির উদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লাহসহ বেশকিছু নেতাকর্মী গিয়ে তাদের মনোনীত একজনের মনোনয়নপত্র চান। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়।

তখন জামায়াতের একজন মারধরের শিকার হন। এ খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবিরসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থক দেবোত্তর বাজারে জড়ো হয়। তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দেবোত্তর বাজার প্রদক্ষিণ করে বিএনপির অফিস ভাঙচুর করে।
 
এরপর জামায়াতের নেতাকর্মীরা যোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে প্রবেশ করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাজার প্রদক্ষিণ করার পর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয় ভাঙচুর করে। আসর নামাজের নামাজরত অবস্থায় বিএনপির লোকজন হামলা করে। নামাজ শেষ করে লাঠিসোঁঠা নিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়।

এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন দেবোত্তর বাজারে বিএনপি অফিস ও আশপাশের কমপক্ষে বিএনপি সমর্থিতদের ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। উভয়পক্ষের কয়েকজন কমবেশি আহত হয়। এরপর রাত ৯টার দিকে জামায়াত অফিসে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও গুলি করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এদিকে অবস্থা বেগতিক ভেবে মুহূর্তের মধ্যে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
 
আহতদের মধ্যে বিএনপির মামুন (৪২), কামরুল ইসলাম (৩৮), আছিম উদ্দিন (৫৫), রতন মোল্লা (৩৮) ও জামায়াতে ইসলামীর সাইদুল ইসলাম (৪২) এর নাম জানা গেছে। বাকিদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। আহতরা বিভিন্ন ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন আলম বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা অতর্কিত আমাদের দলীয় অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করছে। কী কারণে ভাঙচুর করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে পুলিশসহ সবাই বসছে। এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলব।

আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নকিবুল্লাহ বলেন, দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য পদের মনোনয়নপত্র জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তুলতে গেলে বিএনপির লোকজন বাধা দেয়। সেই সাথে তারা আমাদের আটঘরিয়া পৌর জামাতের আমিরকে মারধর করে। আসরের নামাজ আদায়কালে বিএনপির লোকজন মসজিদের সামনে গুলি ও বোমা ফাটালে আমরা নামাজ শেষে তাদের প্রতিহত করতে ধাওয়া দেই। সন্ধ্যার পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের অফিস ভাঙচুর করেছে।

এ বিষয়ে আটঘরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, উভয়পক্ষ উভয়পক্ষের অফিস ভাঙচুর করেছে। কিছুটা সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে। বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের আজ ছিল শেষ দিন। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন উত্তোলন করলেও জামায়াতে লোকজন তুলতে আসলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কি হয়েছে সেটা আমার জানা নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই কলেজের এই নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। 

এমআর

Share this news on: