‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ফের তোলপাড় ভারত। দিল্লি নাকি আগেই এই অভিযানের কথা জানিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর অকপটে স্বীকার করেছেন সে কথা। এতেই মোদি সরকারের সমরনীতি নিয়ে তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়েছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিরোধীরা বলছেন, যদি অভিযানের আগে বলেই দেয়া হবে, তবে লাভ কি হলো? তারা আগেই সতর্ক এবং প্রতিরোধের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
দেশটির প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, হামলার আগে পাকিস্তানকে সবকিছু জানিয়ে দিয়ে, ভারতের নিরাপত্তা ও সেনাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন মোদি। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আগে জানানোর কারণে পাকিস্তান কয়টা বিমান ধ্বংস করেছে আপনারা?’
এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘হামলার আগে পাকিস্তানকে জানানো গুরুতর অপরাধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন ভারত সরকার এটি করেছে। আমাদের সেনাদের জীবন বিপন্ন করার অনুমোদন কে দিয়েছেন? শুধু তাদের কারণে আমাদের বিমানবাহিনী কতগুলো বিমান হারিয়েছে?”
নিজ বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে রাহুল গান্ধী জয়শঙ্করের একটি ভিডিও জুড়ে দেন। যেখানী জয়শংকর বলছেন, পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে’ হামলার আগে ইসলামাবাদকে অবহিত করা হয়। তিনি বলেন, ‘অপারেশনের শুরুতে, আমরা পাকিস্তানকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলি, আমরা মূলত সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছি। আমরা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, পাক সেনাদের ওপর কিংবা তাদের অবকাঠামোতে কোনো হামলা চালাব না।’
পাক সেনাদের অপারেশন সিঁদুর থেকে দূরে রাখতে এবং তারা যেন যুদ্ধে না জড়ায় সে লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদি সরকার। জয়শংকরের ভাষ্যে, তাদের কাছে ভারতের পরামর্শ মেনে নেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা আমাদের এই ভালো পরামর্শ বেছে না নিয়ে বরং পাল্টা আক্রমণ করেছে।’
জয়শংকরের এমন স্বীকারোক্তির পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের সরকারি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো জানায়, জয়শঙ্করের কথা ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে। পাকিস্তানকে হামলার আগে হামলা সম্পর্কে জানানো হয়েছে, এমন কিছু তিনি বলেননি। তবে ভিডিওতে জয়শঙ্করের ভাষা স্পষ্ট। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেনি।
মোদি সরকারের যুদ্ধ নীতির সমালোচনা করেছেন নয়াদিল্লি ভিত্তিক আম আদমি পার্টিও। দলটির নেতা ও রাজ্যসভার এমপি সঞ্জয় সিং বলেছেন, ‘এটি দেশদ্রোহিতার শামিল। যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেন, হামলার আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এটি ভারত এবং আমাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেঈমানির সামিল। পাকিস্তানকে আগে এ ব্যাপারে জানানো ক্ষমার অযোগ্য।’
মোদিকে এর জবাব দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন এই আম আদমি পার্টির নেতা। তিনি বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উত্তর দিতে হবে। ট্রাম্প তো আগেই এ কথা বলেছিলেন। মোদি জবাব দিক তিনি কতটা সত্যি বলছেন। আর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন সেগুলোর সত্যতা কতটা। কেন পাকিস্তানকে আগে বলা হলো। এটি কি উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা ছিল। ভারতের মানুষের এ ব্যাপারে জানার অধিকার আছে।’
এসএন