সুরমা-কুশিয়ারায় পানি বাড়ছে, আপাতত নেই বন্যার শঙ্কা

সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে হাওর ও নদ-নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ছে। সুরমা, কুশিয়ারা নদীসহ অনেক নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে আপাতত বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বন্যার তথ্য এবং বিগত বছরের অভিজ্ঞতায় সুনামগঞ্জের নদীতীরবর্তী ও হাওরাঞ্চলের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আলী বলেন, হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলে সমস্যা নেই। কিন্তু বন্যা হলে তো কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তুলেছি, ঘরটাও ঠিক করার দরকার ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। পানি খবর শুনলেই এখন ভয় লাগে।

সুরমা নদীর তীরবর্তী বড়পাড়ার গৃহবধূ সুরেজান বিবি বলেন, আমার ঘর নদীর একদম পাশে। প্রতিবছর বন্যা হলে পানি ঢুকে পড়ে। পানি বাড়ছে দেখে ভয় পাচ্ছি। যে পরিমাণ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না।
অন্যদিকে অনেকেই বলছেন—এই পানি হাওরের জন্য আশীর্বাদ। বৃষ্টির পানির কারণে হাওর জীবন্ত হয়ে ওঠে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী মুসা মিয়া বলেন, বর্ষায় ধীরে ধীরে যখন হাওরে পানি বাড়ে, তখনই আমরা মাছ ধরার জাল, ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়টায় মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই, অনেকে দেনা-পাওনাও মিটাই। হাওরের পানিতে এখন কৈ, টেংরা, শিং, চিংড়িসহ অনেক ধরনের দেশি মাছ ওঠে। এসব মাছ বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, কিন্তু এই পানি বেড়ে যেন বন্যা না হয়।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া বলেন, ফেসবুকে খালি পানির খবর দেখি। কিন্তু হাওরে পানি একটু একটু করে ঢুকছে। খুব বেশি পানি নেই, যা আছে তা স্বাভাবিক পানি। বরং এই পানিতে আমরা মাছ পাব, জীবিকা চলবে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষা মৌসুমের স্বাভাবিক চিত্র। এই বৃষ্টির কারণে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে তা বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। আমাদের হাওরে পানি ধারণের যথেষ্ট জায়গা আছে, হাওর পরিপূর্ণ হতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যার যে তথ্য প্রকাশ হচ্ছে তা সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু কররে আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।

আরআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মৃদু শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে তেঁতুলিয়া, নামছে তাপমাত্রা Dec 14, 2025
img

উইমেন’স বিগ ব্যাশ

লির দুর্দান্ত ইনিংসে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল হোবার্ট হারিকেন্স Dec 14, 2025
img
দেশকে যারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না: প্রিন্স Dec 14, 2025
img

লিগ ওয়ান

মেজের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ফিরল পিএসজি Dec 14, 2025
img

ইসির পরিপত্র জারি

গণভোটের ব্যালট হবে গোলাপী, ফেলতে হবে একই বক্সে Dec 14, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

এভারটনের বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতে শীর্ষ চারে চেলসি Dec 14, 2025
img
হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক গ্রেপ্তার Dec 14, 2025
img
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে শহীদদের স্বপ্ন পূরণ হবে : জবি উপাচার্য Dec 14, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

উলভসের ২ আত্মঘাতী গোলে জয়ে ফিরল আর্সেনাল Dec 14, 2025
img
সুদানে ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহতের ঘটনায় জাতিসংঘের নিন্দা Dec 14, 2025
img
নাটোরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাবেক এমপি পুত্রের প্রাণহানি Dec 14, 2025
img
আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া Dec 14, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

ফেরার ম্যাচে সালাহর অ্যাসিস্ট ও একিটিকের জোড়া গোলে ব্রাইটনকে হারাল লিভারপুল Dec 14, 2025
img
হাদির ঘটনায় সিলেট সীমান্তে বিজিবির বাড়তি নজরদারি Dec 14, 2025
img
ফিরছেন তারেক রহমান, বাস ভবনে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি Dec 14, 2025
img
নিজের খুশি-স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছেন অক্ষয় খন্না Dec 14, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ Dec 14, 2025
img
আজ ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ হানাদারমুক্ত দিবস Dec 14, 2025
img
ওসমান হাদির ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা বিজিবির Dec 14, 2025
img
মুস্তাফিজের খরুচে বোলিং, রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জয় পেল দুবাই ক্যাপিটালস Dec 14, 2025