যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ইহুদি জাদুঘরের কাছে গুলিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুইজন কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের একজন পুরুষ এবং অপরজন নারী বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম। হামলার সময় ছিল স্থানীয় সময় রাত ৯টা ০৫ মিনিট।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, এই হামলার ঘটনা ঘটে যখন ওই দুই কর্মকর্তা ‘ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরে’ একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাইরে বের হচ্ছিলেন।
মার্কিন পুলিশ এই ঘটনায় এলিয়াস রদ্রিগেজ নামের ৩০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে। তিনি শিকাগো শহরের বাসিন্দা।
পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সন্দেহভাজন এলিয়াস রদ্রিগেজকে হামলার আগে জাদুঘরের বাইরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এরপর সে চারজনের একটি দলের কাছে যায়, একটি হ্যান্ডগান বের করে এবং দুইজনকে গুলি করে।
এফবিআই-এর ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের সহকারী পরিচালক স্টিভ জেনসেন বলেন, তদন্তে ‘সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাব্য যোগসূত্র’ এবং এটি ‘হেট ক্রাইম’ (ঘৃণা থেকে উদ্বুদ্ধ অপরাধ) ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
ডিসি পুলিশ প্রধান পামেলা স্মিথ জানিয়েছেন, রদ্রিগেজকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার পর সে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস নিহত দম্পতির নাম প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, ‘তাদের কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডে মর্মাহত ও বিধ্বস্ত’। নিহতরা হলেন, ইয়ারন লিশিনস্কি এবং তার বান্ধবী সারা লিন মিলগ্রিম।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লেইটার সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহত দুইজন ছিলেন একটি প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল। তারা খুব শিগগিরই বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিলেন।
লেইটার বলেন, ‘ছেলেটি এই সপ্তাহেই একটি আংটি কিনেছিল। সে আগামী সপ্তাহে জেরুজালেমে তার প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।’
এ ঘটনার পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধান ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, ‘এই নৃশংস অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার নিন্দা করে বলেছেন, এটি একটি ‘স্পষ্ট ইহুদি-বিরোধী সন্ত্রাসী হামলা’। তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ তিনি লিখেছেন, ‘এই ভয়াবহ ডিসি হত্যাকাণ্ড স্পষ্টতই ইহুদি-বিদ্বেষের কারণে ঘটেছে, এখনই তা বন্ধ হওয়া উচিত! ঘৃণা ও উগ্রবাদের যুক্তরাষ্ট্রে কোনো স্থান নেই।’
ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত এই ঘটনাকে ‘নৃশংস ইহুদি-বিরোধী সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র তাল নাইম কোহেন এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরে একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে কাছ থেকে গুলি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখছিঅ আশা করছি তারা হামলাকারীকে বিচারের আওতায় আনবে এবং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলের কূটনৈতিক প্রতিনিধি ও ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল ‘আমেরিকান জিউইশ কমিটি’। এর বোর্ড সদস্য জোজো কালিন বলেন, ‘আমি নিহত যুগলকে চিনতাম না, কিন্তু আমার অপরাধবোধ হচ্ছে। আমার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেই তাদের জীবন গেছে—এটা ভেবে নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে।’
জোজো কালিন বলেন, ‘আমরা মূলত এই বিষয়ে আলোচনা করছিলাম যে, কীভাবে গাজার মানুষের জন্য একসঙ্গে কাজ করা যায়। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়পক্ষেরই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে—এই কথা বলার পরপরই এমন একটি ঘৃণামূলক হামলা সত্যিই হৃদয়বিদারক।’
সূত্র : বিবিসি
এফপি/ টিএ