অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া স্বাভাবিক নয়: হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ মনে করেন, অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হওয়া দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া মোটেই স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

আজ (বৃহস্পতিবার, ২২ মে) বিকেলে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে হাসনাত দাবি করেন, তার দল এনসিপিকে ‘নির্বাচনবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে সচেতনভাবেই এক ধরনের কলঙ্ক দেয়ার চেষ্টা চলছে।

হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘এনসিপিকে নির্বাচনবিরোধী আখ্যা দিয়ে সচেতনভাবেই এক ধরনের কলঙ্ক দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, ছাত্র উপদেষ্টারা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়, এমন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করার নানা কার্যক্রমও চলমান। এই চক্রান্ত কয়েকটি দিক থেকে পরিচালিত হচ্ছে।’

হাসনাতের ভাষ্য, ‘অথচ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। গতকাল (২১ মে) এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত যে সময় দিয়েছেন, আমরা সেটিকে সমর্থন করেছি। এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে আমরা এর মধ্যে বিচার ও সংস্কারের কথা বলেছি।’’ অন্যদিকে, ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ১০ মে বলেন, ‘‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই।’’ তিনি একাধিকবার নির্বাচন বিষয়ে এই অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।’

দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া অস্বাভাবিক উল্লেখ এনসিপির এই নেতা লেখেন, ‘তারপরও, দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা এবং ইন্টারিম সরকারের অংশ হওয়া দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া মোটেই স্বাভাবিক কোন বিষয় বলে মনে করি না।’

প্রসঙ্গত, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর কাকরাইল মোড়, মৎস্য ভবন মোড় ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন তারা অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবি করছেন।

ওয়ান-ইলেভেনের কথা স্মরণ করিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘অন্যদিকে, আমাদের সাব-কনশাস মাইন্ডে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিশের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অথচ বিএনপি ঐতিহাসিকভাবে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী একটা দল। আমরা এখনো ওয়ান-ইলেভেনের ইতিহাস ভুলে যাইনি, এখনো তারেক রহমানের নির্যাতনের ঘটনা আমাদের স্মরণে রয়েছে।’

তিনি লেখেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা সতর্ক পাহারাদার। দেশের প্রয়োজনে, সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনে, আমরা প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে চব্বিশের অভ্যুত্থান ঘটেছে; সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে আমরা মেনে নেব না। রাজনৈতিক সালিশের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না, তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে হাসনাত লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে আমরা যাদের পাশে পেয়েছি, তাদের প্রতি আমাদের ঐতিহাসিক কৃতজ্ঞতা থাকবে। আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতেও সব পক্ষকে এক থাকতে হবে। এই দাবিতে বড় কোনো দলের নির্লিপ্ততা আমাদের হতাশ করে।’

দ্রুত নির্বাচনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত জানিয়ে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক লেখেন, ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। ক্ষণস্থায়ী ফায়দা লুটতে গিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বিপুল সম্ভাবনার জন-আকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করা হলে, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ব্যর্থতা।’

সবশেষ হাসনাত লেখেন, ‘আমরা যেন নিজেরাই বিভাজনের পথ বেছে নিয়ে অন্য কাউকে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ না দিই। বাইরের কাউকে রাজনৈতিক মাতব্বরি করার সুযোগ দিয়ে দেশের শুদ্ধ গণতান্ত্রিক সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে না ফেলি। বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আধিপত্যবাদবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে এক হতে হবে।’

আরএম/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুই উপদেষ্টাকে ‘ভারতের চর’ আখ্যা দিয়ে অপসারণের দাবি May 23, 2025
img
বগুড়ায় গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের পাশে সেনাবাহিনী May 23, 2025
img
মধ্যরাতে ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের পোস্ট May 23, 2025
img
আওয়ামী লীগের প্রশ্নে আমরা সবাই এক, ইনশাআল্লাহ:ইলিয়াস May 23, 2025
img
‘ঢাকার রাজপথের যোদ্ধারা রেডি থাইকেন, আমরা আসতেছি রাজপথে জুলাইকে বাঁচাতে’ May 23, 2025
img
লন্ডনে সালমানপুত্র সায়ানের সম্পত্তি জব্দ করছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি May 23, 2025
img
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান, এনবিআরে আন্দোলন চলবে: ঐক্য পরিষদ May 23, 2025
img
‘৩৬ জুলাই' বৃহৎ শক্তি ও স্পিরিটের নাম: শিবির সভাপতি May 23, 2025
img
বিতর্কিত নির্বাচন হলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, দায় নিতে চান না ড. ইউনূস May 23, 2025
img
পদত্যাগ করার পরেই জনগণ ক্ষমার চিন্তা করবে: রাশেদ খাঁন May 23, 2025
img
খাস জমিতে স্থাপনা: শ্রমিক দলের নেতাকে ৭ দিনের কারাদণ্ড May 23, 2025
img
মেঘনার বালুমহাল ইজারা–কাণ্ডে বরিশালে বিএনপির ১২ নেতার পদ স্থগিত May 23, 2025
img
নাপিতের কাজও করেছেন কমল হাসান May 23, 2025
img
রাজউকের সার্ভার হ্যাক করে ভবনের ‘অনুমোদন’ May 23, 2025
img
দ্বিতীয় দিনে লাল গালিচায় কালো পোশাকে ঝলমলে ঐশ্বরিয়া May 23, 2025
img
ভারতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ May 23, 2025
img
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জুলাই ঐক্যের May 23, 2025
img
অভিনেত্রী শাওন পালাবার পথ খুঁজে পাবে না: ইলিয়াস May 23, 2025
img
উপদেষ্টা মাহফুজের পর হাসনাতেরও ঐক্যের ডাক May 23, 2025
img
আমাদের না আছে মরার ভয় না আছে হারাবার কিছু: আসিফ মাহমুদ May 23, 2025