দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ আগেভাগে স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে এই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমানো সম্ভব। এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই দেশের ৩০ লাখ নারীকে এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
রোববার (২৫ মে) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে এ লক্ষ্যের কথা জানান স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী।
‘ইলেক্ট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং’ শীর্ষক কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব বলেন,“চিকিৎসা ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ দিতে হবে। যারা ঝুঁকিতে আছেন, তাদের আগাম চিকিৎসা নিতে হবে। স্ক্রিনিং ও প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা কমানো সম্ভব।”
তিনি জানান,“নারীদের মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ জরায়ুমুখ ক্যান্সার। প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজারের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার নারী, মারা যান ৫ হাজার। অথচ এই দুই ধরনের ক্যান্সারই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আগেভাগেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ডা. সারোয়ার বারী বলেন, “অনেক নারী ক্যান্সারের জটিল পর্যায়ে পৌঁছে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন রোগ অনেক ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সব পর্যায়ের হাসপাতালে ইপিসিবিসিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে স্ক্রিনিং কাঠামো গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৬০০ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্ক্রিনিং করা যাচ্ছে। ৫২টি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারের আগাম চিকিৎসা ও রোগ শনাক্ত করা হচ্ছে।”
সবশেষে সচিব বলেন, “এখন পর্যন্ত ৬ লাখ নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ৩০ লাখ নারীকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা। এজন্য কীভাবে ৩০-৬০ বছর বয়সি সব নারীকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা যায়, সে পদ্ধতি নির্ধারণ করা দরকার। এটি দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হলেও আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৬,৭৫২ জন নারী এইচপিভি স্ক্রিনিং করিয়েছেন। এর মধ্যে ১,৪৩১ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়, যা গড়ে আক্রান্তের হার ৪.২৭ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা বলেন, “এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। বছরে বছরে স্ক্রিনিংয়ের হার বাড়ছে, যা একটি ভালো দিক। কিন্তু ৩০ লাখ নারীর মধ্যে মাত্র ৬ লাখ স্ক্রিনিংয়ের আওতায় এসেছে, এটা যথেষ্ট নয়।”
অন্যদিকে, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার বলেন, “নারীস্বাস্থ্য এখনো অবহেলিত। নারীস্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশের নারীস্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি পূর্ণাঙ্গ নারী স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ।
আরএম/এসএন