চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন একটি গার্মেন্টস কারখানায় ফের বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে পুলিশ, যা পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এটি চলতি মে মাসে এ ধরনের তৃতীয় অভিযান, যেখানে মোট ইউনিফর্ম জব্দের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৪৭ হাজার।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কারখানাটি থেকে প্রায় ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে। পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, এসব পোশাক কেএনএফ-এর সদস্যদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
সূত্র আরও জানায়, উদ্ধার করা ইউনিফর্মগুলো সামরিক ধাঁচের এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ছাপা ও সেলাই করা হয়, যাতে গোপনে পাহাড়ে পাচার করা যায়। তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। একজন নগর পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলাটির বাদী হবেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার একজন উপপরিদর্শক।
এর আগেও একই গার্মেন্টস এলাকা থেকে দুই দফায় বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। গত ১৭ মে রিংভো অ্যাপারেলস নামের একটি পোশাক কারখানায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ২০ হাজার ৩০০টি ইউনিফর্ম জব্দ করে। তদন্তে উঠে আসে, এসব পোশাক দুই কোটি টাকার বিনিময়ে কেএনএফ-এর জন্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল।
ওই ঘটনায় গার্মেন্টস মালিক সাহেদুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি দুজন হলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তাঁরা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের বাসিন্দা মংহলাসিন মারমার কাছ থেকে এ ফরমাশ এনেছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশ জানায়, মে মাসেই পোশাকগুলো সরবরাহ করার কথা ছিল।
১৮ মে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন।
তৃতীয় দফা অভিযানেও একই ধাঁচের পোশাক
এরপর ২৬ মে দিবাগত রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়াহাট এলাকার একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে আরও ১১ হাজার ৭৮৫টি ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এগুলোর ডিজাইন ও মান প্রথম দুই দফার মতোই বলে জানায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
অবৈধ ইউনিফর্ম তৈরির ঘটনায় উদ্বেগ
টানা তিন দফা অভিযানে একই উদ্দেশ্যে তৈরি বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গার্মেন্টস খাত ব্যবহৃত হয়ে যদি এই ধরনের সশস্ত্র সংগঠনের সহায়তা করা হয়, তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
একই এলাকার গার্মেন্টস থেকে টানা তিন দফায় বিপুল ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় পাহাড়ি অঞ্চলে চলমান সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্তের অগ্রগতি ও অপরাধ চক্রের মূলহোতারা শনাক্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন আরও সতর্ক এবং সক্রিয়।
এই ঘটনায় পরবর্তী পদক্ষেপ ও আইনি প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, তা এখন দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষের নজরে রয়েছে।
আরআর/টিএ