মার্কিন আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরপরই তেলের বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে। এতে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই রায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে একটি নতুন স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়, যা ভবিষ্যতে জ্বালানির চাহিদা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। এদিকে বাজারের দৃষ্টি এখন রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ সীমিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং ওপেক প্লাসের আসন্ন বৈঠকে উৎপাদন বাড়ানো হবে কি না, সেই দিকেও।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৮১ সেন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ ডলার ৭১ সেন্টে। আর মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বা ৮৩ সেন্ট বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয়েছে ৬২ ডলার ৬২ সেন্ট।
এর আগে বুধবার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্ক স্থগিত করেছেন দেশটির আদালত। আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন ট্রাম্প।
মূলত আদালতে করা দুটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। একটি মামলা করেছিল লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার নামের একটি আইনি সংস্থা। ট্রাম্পের শুল্কের নিশানা হওয়া দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করে-এমন পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মামলাটি করেছিল তারা। অপর মামলাটি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ১৩টি অঙ্গরাজ্যের পক্ষ থেকে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল আদেশে বলেন, কংগ্রেসকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সুরক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতার মাধ্যমে তা বাতিল করা যায় না।
তবে আদালতের আদেশের পর এর বিরুদ্ধে আপিলের একটি নোটিশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়টার্সের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় বিশ্বব্যাপী বাজারে ঝুঁকির প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীরা আগে থেকেই শুল্কের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় ছিলেন। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, যেহেতু ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলেছে, তাই এই স্বস্তি হয়তো কেবল সাময়িক হতে পারে।
ব্রিসবেনের সিটি ইনডেক্সের বিশ্লেষক ম্যাট সিম্পসন বলেন, বিনিয়োগকারীরা এমন এক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন, যেটাকে তারা অপছন্দ করলেও সবসময় গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকেন।’
এদিকে, অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ দিক থেকে, রাশিয়ান তেলের উপর সম্ভাব্য নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একই সময়ে, পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ও তাদের মিত্ররা, যাদের সম্মিলিতভাবে ওপেক প্লাস বলা হয়-আগামী শনিবার জুলাই মাসের জন্য তেল উৎপাদন আরও বাড়ানোর বিষয়ে একমত হতে পারে।
আরএ/টিএ