বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আকাশ খানের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলার সবকটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ মে) এ ঘটনায় ৬ জনকে অভিযুক্ত করে ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধমে কমিটি স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, টঙ্গী পূর্ব থানা চত্বরে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে আকাশ খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। একাধিকবার তাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমরা আমাদের কাছে চারটা মামলার জন্য পাঁচ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকা চাঁদা চাওনি? আকাশ খান এ সময় ক্যামেরার সামনে নিরুত্তর ছিলেন।
ভিডিওতে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায় এক যুবককে, যিনি দাবি করেন রাত ১২টার দিকে আকাশ খান তার বাড়িতে যান বাড়ি ভাড়া নেওয়ার অজুহাতে।
তার সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিলেন। ওই যুবক বলেন, ‘আকাশরা বাড়িতে ঢুকেই আমাদের জানায়, আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এবং তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এরপর তারা থানা-পুলিশের ঝামেলার ভয় দেখাতে থাকেন।’
ঘটনার বর্ণনায় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সমাধানের পথ খুঁজতে চাইলে তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করে।
এক পর্যায়ে হাতে থাকা ২০ হাজার টাকা এবং বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে আরো ৬ হাজার টাকা তুলে দিলে তারা সেখান থেকে চলে যায়। তবে পরদিন সকাল ১১টার মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখতে বলে যায়।’
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে সংগঠনটির গাজীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাবিল আল ওয়ালিদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল থানা ও ওয়ার্ডের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
থানায় দায়ের হওয়া লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২৮ মে রাতে টঙ্গীর শেরে বাংলা রোড এলাকায় সাবেক এক আওয়ামী লীগ নেতা বাড়িতে প্রবেশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টঙ্গী পূর্ব থানার ১৮ থেকে ২০ জন নেতাকর্মী।
এ সময় তারা ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে চারটি মামলার কথা বলে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায়, তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার ভয়ভীতি দেখান।
‘এক পর্যায়ে ওই পরিবারের কাছ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তারা। এ সময় ২৯ তারিখের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার দাবিও জানান তারা।’
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় থানায় অভিযোগ করতে যান ভুক্তভোগীর পরিবার। এ সময় থানা কম্পাউন্ডে আকাশ খানের সাথে দেখা হলে টাকা আদায় ও চাঁদা দাবির যৌক্তিক কারণ জানতে চান তারা। এ ঘটনার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
পরে গভীর রাত পর্যন্ত বিষয়টি সমাধান চেষ্টা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলার নেতারা।
টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
এসএম/টিএ