পদত্যাগের ব্যাপারে গত সপ্তাহে ওঠা গুঞ্জন নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার জাপানের টোকিওভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় পদত্যাগের গুঞ্জন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকাকালে আমি এই প্রশ্নের জবাব দিইনি। যখন আমি বাংলাদেশেই এ ব্যাপারে বলিনি, তখন যদি জাপানে বলি, সেটা আমার জন্য অনেক অস্বস্তি তৈরি করবে।’
গত সপ্তাহে খবর ছড়িয়ে পড়েছ, ড. ইউনূস এক ছাত্রনেতাকে বলেছেন—যদি দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে একমত না হয় তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন কি না— সাক্ষাৎকারে নিক্কেই এশিয়া জানতে চাইলে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এ নিয়ে চলতে থাকে গুঞ্জন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে এরপর এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছুই বলেননি তিনি।
এবার টোকিওভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এই প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ বৃহস্পতিবার নিক্কেইয়ের বার্ষিক ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের সাইডলাইনে তিনি এই সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি নিয়েও প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, রপ্তানির ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকির মুখেও বাংলাদেশ আমেরিকাকে আরও তুলা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব কাজে আসবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, যদি আরও মার্কিন পণ্য কেনার প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাহলে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে অনুরূপ পণ্য আমদানিকে এই দিকে নিয়ে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, আমরা মধ্য এশিয়া থেকে প্রচুর তুলা কিনি। ভারত ও অন্যান্য অনেক দেশ থেকে তুলা কেনা হয়। কেন আমরা এই পণ্য আমেরিকা থেকে কিনব না–এটা নিয়ে আমরা ভাবছি, যাতে তাদের (আমেরিকা) সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি অনেক কমে যায়।’
নিক্কেই এশিয়া বলছে, গত জুন পর্যন্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ আমেরিকায় ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। এই আমদানির মধ্যে ৩৬১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ছিল তুলা। প্রধান পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কাঁচা তুলা আমদানি করে, যার কিছু অংশ আসে নিকটবর্তী মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান থেকে। একই অর্থবছরে দেশের মোট আমদানির ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল তুলা।
বাংলাদেশ বেশিরভাগ জ্বালানি তেল মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনূস বলেছেন, পণ্যটি আমেরিকা থেকেও কেনা যেতে পারে। যদিও তিনি এখনো বাণিজ্য আলোচনার সময়সীমা এবং সম্ভাব্য শুল্কের শতাংশ সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তবে ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতিকে কোনো ধরণের হুমকি হিসেবে দেখছি না। আমরা এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি।’
দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিষয়ে ড. ইউনূস নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১-১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্থ ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে এবং জব্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমান সরকার এই টাকা হাতে পেলে দুটো সম্পদ তহবিল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য অর্থ প্রদান করবে। এই অর্থ দরিদ্রদের জীবন পাল্টে দেবে এবং তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করবে।
এসএন